করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রায় দেড় বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে উপজেলার প্রায় ৬১টি মাধ্যমিক, ৭টি উচ্চ মাধ্যমিক, ২৩টি মাদরাসার ছাত্রীরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন। এ তালিকায় কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীও রয়েছে। ঘাটাইল এস,ই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাইধার চালা, কদমতলী, হামিদপুর, ধলাপাড়া, সাগরদিঘী, মমিনপুর, কাজলা, দেওপাড়া, জামুরিয়া, ছয়ানি বকশিয়া, লোকের পাড়া, দিগড়, দিঘলকান্দি, পাকুটিয়া, নাগবাড়ি, চৈথট্র, মোটের বাজার, গারোবাজার, শেখ ফজিলাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাটাইল দাখিল মাদ্রাসা, আব্দুল মজিদ ভূইঞা মহিলা মাদ্রাসা, পোড়াবাড়ি ফাজিল মাদরাসা সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে বাল্যবিবাহের এমন করুন চিত্র লক্ষ করা গেছে।
জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দারিদ্র্যতা, সংসারের অভাব অনটন, পারিবারিক এবং সামাজিক অসচেতনতার কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে ছাত্রীদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অনেক স্কুল ও মাদরাসার ছোট ছোট শিশুরা শিশু শ্রমের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তবে এর সঠিক সংখ্যা কত তার কোন তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। এত কিছুর পরেও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অদম্য সাহস ও দৃঢ় মনোবলের কারণে বাল্যবিবাহের পরও সকল বাঁধা উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে এসেছেন ক্লাস করতে। উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষার্থী মাফিয়া, রেমি খানম, সুমি আক্তার মৌটুসি, মোহনা আক্তার, মিতু আক্তার, রিয়া আক্তার ও দশম শ্রেণির ছাত্রী মোর্শেদা খাতুন, সানিয়া আক্তার ও লোপা আক্তার। এরা সকলেই করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন সময়ে বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন।
বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ওরা স্কুলে এসেছে। তবে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় দশম শ্রেণির ছাত্রী লোপা আক্তারের সাথে। সে জানায়, তার বাড়ি বিদ্যালযের পাশেই সংগ্রামপুর গ্রামে। বাবা সেলিম রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, মা শাহিনা আক্তার গৃহিণী। লোপারা দুই বোন কোন ভাই নেই। ছোট বোন সোনালী স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালযের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী।
লোপার ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করে স্বাবলম্বী হওয়ার। নাসিং পড়ে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে। কিন্ত করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার সে ইচ্ছায় ক্ষত ধরেছে। বালিকা বধূ সেজে যেতে হয়েছে স্বামীর সংসারে।
লোপা আরো জানায়, তার অমতেই তার বাবা-মা একই উপজেলার চৈথট্র গ্রামে তার বিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলেও বাবা-মা শুনেনি। আমার পক্ষ নিয়ে দাদা ও কাকারা প্রতিবাদ করলেও আমার বাবা সেটা শুনেনি। কোন কাজ হয়নি। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ মুহূর্তে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়েছি সংসারের অভাব অনটনের কারণে।
শুধু লোপা আক্তার নয়, একই সুরে কথা বলেন বাল্য বিয়ের শিকার হওয়া মাফিয়া, রেমি খানম, সুমি আক্তার মৌটুসি, মোহনা আক্তার, মিতু আক্তার, রিয়া আক্তার, মোর্শেদা খাতুন ও সানিয়া আক্তার।
মৌটুসি জানান, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও বাবা-মার কারণেই তাদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। আমি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই স্বামীর সংসার থেকে এখনো বাঁধা আসেনি। প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
একই অবসস্থা প্রায় সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এদের সকলের মুখে একই কথা প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা হতাশা ও দারিদ্রতার কারণে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, বিয়ের পর অনেক মেয়েরই লেখাপড়া বন্ধ করে দেন তাদের পরিবার। নানা বাধার কারণে তাদের বিদ্যালয়ে ফেরানো সম্ভব হয় না। বিয়ের পরও যারা বিদ্যালয়ে এসেছে আমাদের উচিৎ তাদেরকে উৎসাহিত করা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিউটি বেগম বলেন, বিয়ের পরও তারা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বিদ্যালয়ে এসেছে এটা ভালো দিক। যা নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মনোবল অটুট রাখতে সহযোগিতা করবে। বাল্য বিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি এটি দুর করতে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়