বাড়িতে থেকেও সব সেবার ফি দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, পরিবহন, গ্রন্থাগার ও গবেষণাগারসহ কোনো ধরনের সেবাই গ্রহণ করেননি। তবে এক বছরের বেশি সময় ধরে বাড়িতে অবস্থান করার পরও এসব সেবা বাবদ ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রাইভেট টিউশন ও খণ্ডকালীন চাকরি করে তাদের অনেকেই পড়ার খরচ পরিশোধ করতেন। যদিও করোনার বন্ধে বাড়ি চলে যাওয়ায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই এসব আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগের হারে ফি আরোপ করায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পরই গত বছরের ১৮ মার্চ আবাসিক হল ছাড়তে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। সে হিসেবে ১৫ মাস ধরে আবাসন সেবার বাইরে রয়েছেন তারা। যদিও একেকজন শিক্ষার্থীকে হলভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা হারে সিট ভাড়া দিতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় বন্ধ ছিল পরিবহন ব্যবস্থাও। যদিও এ সেবার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা করে। একইভাবে কোনো সেবা গ্রহণ ছাড়াই অনুষদভেদে বিভিন্ন হারে গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার কিংবা ব্যবহারিক ফি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার কোনো কোনো অনুষদ সশরীরে পরীক্ষা না নিয়েও কেন্দ্র ফি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ্জোহরা এলি বলেন, ‘আমরা দেড় বছরে একবারের জন্য বাসে উঠিনি, হলেও থাকিনি। তাহলে এগুলোর জন্য ফি দেব কেন? এ ধরনের ফি আদায় সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক।’

সেবা গ্রহণ না করেও ফি গ্রহণ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রশ্নটা যৌক্তিক। কিন্তু এটা আমাকে করে লাভ নেই। সিদ্ধান্তটা যেখান থেকে নেয়া হচ্ছে, সেখানে করতে হবে।’ এ সময় বিষয়টি উপাচার্যকে অবগত করার পরামর্শ দেন তিনি।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সব প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে ক্রিয়াশীল রাখতে হয়। শিক্ষার্থীরা না থাকলেও এগুলো ধরে রাখতে হয়, উন্নয়ন করতে হয়। চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অর্থ সংকটের কথা চিন্তা করে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা জানান তিনি।

সম্প্রতি করোনা মহামারীতে স্থগিত কিংবা জটের মধ্যে পড়া অসমাপ্ত পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা গ্রহণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ভর্তি ও ফরম পূরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে। অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো চবিতেও পরিবহন, চিকিৎসা, স্কাউট, ক্যান্টিন, আবাসনসহ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সব সেবা এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় এসব সেবার জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে ফি আদায় করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের ভর্তি ফির ব্যাংক রসিদ থেকে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের বেতন, রেজিস্ট্রেশন ফির পাশাপাশি প্রত্যেকের কাছ থেকে গ্রন্থাগার ফি বাবদ ২২৩ টাকা, পরিবহন ফি ৫৭৯, চিকিৎসা ফি ৬১, আবাসিক হলের সিট ভাড়া বাবদ ৪৪০, সংস্থাপন খরচ ৪৪০, বাসন-কোসন ফি ১৬৫, গ্রন্থাগারের কার্ড ফি ৩০, বিএনসিসি ফি ৪০, উৎসব ফি ২৪ ও রোভার স্কাউট ফি ২২ টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া করোনার সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের উন্নয়ন ফি বাবদ রসিদবিহীন ২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এমবিএ শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন মনে করেন, গত দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোনো সেবাই গ্রহণ করেননি শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীতে সেবা না নিয়েও শিক্ষার্থীদের ফি গুনতে হচ্ছে। আবার এ বিষয়ে যৌক্তিক দাবি তুলতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। কারণ করোনায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষাজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সোচ্চার হলে প্রশাসন পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, ‘যেহেতু শিক্ষার্থীরা সেবা গ্রহণ করেননি, তাই এসব অর্থ ফেরত দেয়ার বিষয়টি যৌক্তিক। অর্থ ব্যয় না হলে তা ইউজিসিকে পাঠানো উচিত। ইউজিসির আর্থিক শৃঙ্খলার নীতি মেনে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা শনাক্তের পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এতদিন বহাল থাকবে, তা কেউই আগে ভাবতে পারেনি। এজন্য বন্ধ থাকা আবাসিক হলের কক্ষ থেকে জিনিসপত্র নিতে ছুটির মধ্যেও হলে আসতে হয়েছে অনেককে। এ সময় হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে আবাসন ফির বকেয়া পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়েছে তাদের।

এমন অভিজ্ঞতা তুলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেয়ার জন্য হলে প্রবেশ করতে চাইলে আগেই ভাড়া পরিশোধ করে নিতে হয়েছে। প্রথমবার ১০ মাসের ভাড়া দিতে হয়েছে। দ্বিতীয়বার প্রবেশ করতে গেলে আবার দুই মাসের ভাড়া নিয়েছে। সব হলেই এমন অবস্থা। দুই বছর পর হল খুললে দুই বছরের ভাড়া পরিশোধ করে হলে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
এই বিভাগের আরও খবর
টাঙ্গাইলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন উপদেষ্টা

টাঙ্গাইলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন উপদেষ্টা

বাংলা ট্রিবিউন
পেছালো ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ

পেছালো ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ

দৈনিক ইত্তেফাক
লক্ষ্মীপুরে সেতু ধসে যাতায়াত বন্ধ চার দিন, বাতিল হলো একটি কলেজের পরীক্ষা

লক্ষ্মীপুরে সেতু ধসে যাতায়াত বন্ধ চার দিন, বাতিল হলো একটি কলেজের পরীক্ষা

প্রথমআলো
হলগুলোতে ছাত্রদলের পোস্টার, মধ্যরাতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল

হলগুলোতে ছাত্রদলের পোস্টার, মধ্যরাতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল

সমকাল
ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

ভোরের কাগজ
এনটিআরসিএর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, নিয়োগ হবে এক লাখ শিক্ষক

এনটিআরসিএর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, নিয়োগ হবে এক লাখ শিক্ষক

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া