বৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারতের জন্য ভিন্ন দুই পরিস্থিতি নিয়ে এসেছে ইউক্রেন যুদ্ধ। পরস্পরের প্রতি তীব্র বৈরিতা থাকলেও বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে দুটি দেশই।
কূটনৈতিকভাবে বর্তমানে চীনের পরিস্থিতি তুলনামূলক সরল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ, কোয়াড জোট গঠন ও তীব্র অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিতে তেমন কোনো বাধা নেই দেশটির। বরং অনেক পর্যবেক্ষকেরই মতে চলমান সংকট চীনের জন্য অনেক সুবিধাজনক একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
কিছুদিন আগেও বৈশ্বিক ভূরাজনীতির বিশ্লেষকদের লক্ষ্য স্থির ছিল তাইওয়ান প্রণালিতে। যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় কূটনৈতিক প্রয়াসও ঘুরপাক খাচ্ছিল এটিকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু বর্তমানে সবার মনোযোগ এসে কেন্দ্রীভূত হয়েছে ইউক্রেনে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরও কূটনৈতিক কর্মসূচিগুলোয় এ মুহূর্তে শুধু রাশিয়াই দৃশ্যমান। এ অবস্থায় চীনকে নিয়ে নতুন করে আতঙ্কে ভুগছে তাইওয়ান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি চীনের জন্য অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় সুযোগ করে দিয়েছে। ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে বিষয়টির পূর্ণ ফায়দা তুলতে পারবে চীন। সস্তায় রাশিয়া থেকে গ্যাস, জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানির মাধ্যমে নিজের জ্বালানি ক্ষুধা মেটানোর বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটির সামনে। এর আগে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির পর সেখান থেকেও সুলভে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করেছে দেশটি।
কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের মতে, এ যুদ্ধের কারণে চীন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হতে পারে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ইউরোপের দেশগুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। সেক্ষেত্রে চীন বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যদিও এ পর্যবেক্ষণকে উড়িয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, চীন বিশ্ববাণিজ্যের সরবরাহ চেইনে বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশীদার। বিশেষ করে ইউরোপ ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও শিল্প খাতে চীনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে গেলে দেশগুলোর নিজেদেরই বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশগুলো এ পথে নাও হাঁটতে পারে।
রুশ-চীন জোট দিনে দিনে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার বিষয়টি এখন ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ চীনের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে চীন এ সংঘাত প্রশমনে ভূমিকা রাখতে পারত। বিশেষ করে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক অন্য রকম মাত্রা পেয়েছে। আপনাদের এখন চীনকে জিজ্ঞেস করা উচিত, দেশটি রুশ ফেডারেশনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে এ যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের অভিযোগ, চীন ও রাশিয়া, জোটবদ্ধভাবে বিশ্বব্যাপী নতুন ক্ষমতাকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে।
তবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেন সংকট নিয়ে দেয়া প্রতিটি বক্তব্যেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি প্রশমনের আহ্বান জানিয়ে চলেছে বেইজিং। ইউক্রেনে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকালই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ
আলোচনার কয়েক ঘণ্টা পর ইউক্রেনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানায় মস্কো। তবে বিষয়টিতে চীনা প্রেসিডেন্টের আদৌ কোনো ভূমিকা ছিল কিনা, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
ঐতিহাসিকভাবেই ভারত রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতম মিত্রদের অন্যতম। আবার একই সঙ্গে চীনকে মোকাবেলা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তুলেছে নয়াদিল্লি। চলমান ইউক্রেন সংকট দেশটিকে ফেলেছে উভয় সংকটে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে ইউক্রেন যুদ্ধ।
ভারতের সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। দেশটি থেকে বর্তমানে এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ সমরাস্ত্র ক্রয় করছে ভারত। রাশিয়ার ওপর এ মুহূর্তে বিধিনিষেধের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ঠিক একই মুহূর্তে আবার রাশিয়া থেকে ক্রয়কৃত অস্ত্রের সরবরাহ প্রক্রিয়াও চালু রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে পশ্চিমাদের কোপানলে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে ভারত।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো এরই মধ্যে নয়াদিল্লির সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে ভারত যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে রুশ হামলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের পক্ষে এখন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করাটা দিনে দিনে কঠিন হয়ে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যে দেশই ইউক্রেনে রুশ নগ্ন অভিযানে নৈতিক বা মৌন সমর্থন দেবে, এ কাজের ভাগীদার হিসেবে কলঙ্কিত হবে সে দেশটিও।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রুশবিরোধী অবস্থান নিতে চাপ দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনো বিষয়টির পুরোপুরি সমাধান করতে পারিনি।
বাইডেনের ওই বক্তব্যের পরই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ওই ফোনকলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, ‘রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত যৌথ প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা’। এখন পর্যন্ত ভারত শুধু ওই ফোনকলের বিষয়টি স্বীকার করা ছাড়া এ বিষয়ে আর কোনো বক্তব্য দেয়নি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়