বিশ্ববাজারে তেলসহ সব ধরনের জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি, আরো চাপ বাড়বে রিজার্ভে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল জ্বালানি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার। ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭০ থেকে বেড়ে ১৩০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে পড়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দুই বছর আগে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়নে নেমে এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার আগেই এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। হামাস-ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলটির পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। গত চারদিনের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৭ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। পাশাপাশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কয়লাসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। 

দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। চাহিদা বিবেচনায় গত অর্থবছরগুলোয় এসব জ্বালানি পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার। তবে চলতি অর্থবছরে জ্বালানি পণ্যের বাজার বিবেচনায় তা ৯ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে। 

গাজা সংকটকে ঘিরে সামনে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননসহ আরব বিশ্বের অনেক দেশে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তেলসহ প্রতিটি জ্বালানি পণ্যের দাম ১০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। সেটি হলে জ্বালানি পণ্য আমদানি করতে গিয়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। চলতি বছরের মধ্যেই তা ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

গাজায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযানের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হলে সেটি আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও সৌদি আরবের তৎপরতার ওপর নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ারও কিছুটা ভূমিকা আছে। গাজায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযানের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হলে সেটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এর প্রভাবে তখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠতে পারে। বাংলাদেশের রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি এমনিতেই নাজুক অবস্থায় আছে। বিশ্ববাজারে তেলসহ জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়ে গেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যাপকমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর গত চারদিনে জ্বালানি তেলের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অয়েল প্রাইস ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৭ ডলার ৬৯ সেন্টে ওঠানামা করছে। আর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ওঠানামা করছে ৯০ ডলার ৮৯ সেন্টে। গত চারদিনের ব্যবধানে দুই বাজারে ব্যারেলপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ ডলারের বেশি, যা প্রায় ৭ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ব্যারেলপ্রতি ৯৮ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে প্রক্ষেপণ রয়েছে অর্থনৈতিক সূচক, বিনিময় হার, পুঁজিবাজার, সরকারি বন্ড ও পণ্যের দামের বিষয়ে বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ট্রেডিং ইকোনমিক্সের।

দেশে প্রতি বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েলসহ এসব পণ্য ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, শিল্প ও কৃষি খাতে। আমদানীকৃত এসব পণ্যের আর্থিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। 

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, (প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান) প্রায় ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়। আমদানীকৃত এসব জ্বালানি পণ্যে ব্যয় হয় ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।

আমদানীকৃত এসব জ্বালানির মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এছাড়া পরিশোধিত জ্বালানি তেল আসে কুয়েত থেকে। বর্তমানে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে জ্বালানি তেলের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে জ্বালানি তেলের বাজার আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে। 

দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রতিষ্ঠান বিপিসি। সংস্থাটি দুটি দেশ থেকে দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এর একটি সৌদি আরামকো (সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি), অন্যটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (অ্যাডনক)। এর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় বছরে ১৫ লাখ টন। 

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি খারাপ হলে দেশের বাজারেও তার বড় প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিপিসিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের বাজার উত্তপ্ত হলে বিদ্যমান দাম ধরে রাখা কঠিন হবে। বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হলে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে বিপিসির বিদ্যমান জ্বালানি তেলের দাম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বিপিসির পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা জ্বালানি বিভাগকে অবহিত করব। এরপর সরকার সেই অনুযায়ী জ্বালানি তেলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’

দেশে বিপিসি যে জ্বালানি তেল আমদানি করে তার বড় অংকের অর্থের জোগান আসে দাতা সংস্থার ঋণে। বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানিতে এরই মধ্যে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থের জোগান নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবের জেদ্দাভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি)।

জ্বালানি তেলের পাশাপাশি এরই মধ্যে এলএনজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। স্পট মার্কেটে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৪ ডলার ৪৭ সেন্টে ওঠানামা করছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ২০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে এলএনজির বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে।

দেশে স্থানীয় গ্যাসের বাইরে প্রতি বছর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও স্পট থেকে এলএনজি আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। দুই উৎস থেকে বছরে ৪-৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আসছে দেশে। এর মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে আসছে বড় একটি অংশ। পেট্রোবাংলার সাবসিডিয়ারি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে এলএনজি আমদানি করা হয় ৪ দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন টন এসেছে কাতার ও ওমান থেকে। বাকিটা স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা হয়।

জ্বালানিসংশ্লিষ্ট সূত্রের হিসাবে দেখা যায়, স্পট মার্কেট ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৯০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করতে হলে বছরে শুধু এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার (গড়ে ১০ ডলার হিসেবে), যার পুরোটা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার না হলেও অনেকাংশে এলএনজিনির্ভর। ২০১৮ সালের শুরু থেকে চলতি বছরে জুন পর্যন্ত প্রায় এক টিসিএফ এলএনজি আমদানি করেছে বাংলাদেশ।

জ্বালানি পণ্যের এ ঊর্ধ্বমুখিতায় পণ্যটির বাজার পুনরায় অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, মধ্যপ্রাচ্যে সংকট বাড়লে তেলের বাজারে তার বড় প্রভাব রয়েছে। আমদানিনির্ভর দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সবচেয়ে বেশি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। আগে থেকে বিদ্যমান এ ঊর্ধ্বমুখিতা এখনো দ্রুত বাড়ছে। এর একটা বড় প্রভাবক হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য সংকট। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ স্পট থেকে এলএনজি কিনে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। দামে ঊর্ধ্বগতি ও ডলার সংকটের কারণে পেট্রোবাংলা বড় একটি সময় এলএনজি কিনতে পারেনি। বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় স্পট মার্কেটে পণ্যটির দামে সে রকম কিছু হলে পণ্যটি কেনা পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক মাসে কয়লার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী হবে। কয়লার বাজার আদর্শ অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবরে টনপ্রতি কয়লা বিক্রি হচ্ছে ১৪৩ ডলার ৮৫ সেন্ট। আগামী মাসে (নভেম্বরে) তা টনপ্রতি বেড়ে দাঁড়াবে ১৫০ ডলার ৭০ সেন্টে, ডিসেম্বরে ১৫৩ ডলার ৮০ সেন্ট এবং আগামী বছরের জানুয়ারিতে ১৫৭ ডলারে উঠে যেতে পারে।

আমদানীকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে দেশে বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনক্ষম হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। সে হিসেবে চালু থাকা এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর কয়লার প্রয়োজন পড়ে প্রায় ১০ লাখ টন।

বর্তমান বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে প্রতি টন কয়লার দাম গড়ে কমপক্ষে ১৪৫ ডলার হিসাব করলে বছরে ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়। আগামী ২০২৭ সাল নাগাদ দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা দাঁড়াবে ৭ হাজার মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে সাড়ে ২৫ মিলিয়ন টন কয়লার প্রয়োজন পড়বে। সে হিসাবে এ জ্বালানি আমদানিতে ৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে বলে জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণপত্রের (এলসি) দায় মেটানোর জন্য দুই বছরের বেশি সময় ধরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের সাড়ে তিন মাসেই রিজার্ভ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করতে হয়েছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রতি মাসে রিজার্ভ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েও রিজার্ভের ক্ষয় বাড়ছে। আগামী মাসের (নভেম্বর) প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৩০-১৪০ কোটি ডলারের এলসি দায় পরিশোধ করতে হবে। তখন এক ধাক্কায় রিজার্ভের পরিমাণ ১৯ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসবে। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে রিজার্ভের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

তবে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা কম রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘হামাস যদি এক মাস ইসরায়েলের স্থল বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে পারে, সেটিই তাদের বিজয় বলে গণ্য হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির দিকে যাবে। যুদ্ধের ব্যাপ্তি উভয় পক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে জ্বালানি তেলের দাম খুব বেশি বাড়বে না। তবে বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। যুদ্ধ ক্ষণস্থায়ী হলেও বাংলাদেশের রিজার্ভের বিপর্যয় দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমাদের অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, সেটি আমাদেরই কর্মফল। গতানুগতিক কর্মতৎপরতা চালিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনা সম্ভব হবে না।’

ডলার সংকট কমাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানির লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য এলসি খোলার শর্ত কঠোর করা হয়। ব্যাংকগুলোও ডলার সংকটের কারণে নিজেদের এলসি খোলা কমিয়ে দেয়। ফলে অর্থবছর শেষে আমদানির পরিমাণ প্রায় ১৬ শতাংশ কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও (জুলাই-আগস্ট) আমদানির পরিমাণ ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে। 

যদিও আমদানি কমিয়ে ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা সফল হয়নি। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের বড় বিপর্যয় ডলার সংকটকে আরো উসকে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলার, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ডলারের বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোরতার কারণেই রেমিট্যান্সের বড় পতন হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার শুরুটা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ওই সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বেচাকেনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশী-বিদেশী ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব তৎপরতার মুখেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় রেমিট্যান্স ৫০ কোটি ডলার কমে যায়। ২০২২ সালের আগস্টে ২০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এলেও সেপ্টেম্বরে তা ১৫৩ কোটি ডলারে নেমে আসে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখনই ডলারের বিনিময় হার নিয়ে কঠোর হয়েছে, তখনই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় দেখা গেছে।
এই বিভাগের আরও খবর
নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান

নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান

নয়া দিগন্ত
যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ
ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ভোরের কাগজ
আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

মানবজমিন
ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

কালের কণ্ঠ
রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

যুগান্তর
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়