ভারতের পরাশক্তি হয়ে ওঠা দুরূহ করে তুলেছে ভাইরাস

পশ্চিমা বিশ্বে আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ভারত। দেশটির কর্তাব্যক্তিরাও এখন বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠেছেন। তবে তাদের এ প্রত্যাশায় বাদ সেধেছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। মহামারীর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাগুলোকে সামনে নিয়ে আসার পাশাপাশি দেশটির অর্থনীতিকেও নাজুক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে দেশটিতে আরো বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বলছেন, অদূরভবিষ্যতে নিজেকে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ভারতের জন্য অনেক দুরূহ হয়ে পড়েছে। কারো কারো মতে তা অসম্ভবও।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ভারত। বৈশ্বিক পর্যায়ে নিজেকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দেখতে পাচ্ছে নয়াদিল্লি। চীনকে মোকাবেলার তাগিদে নয়াদিল্লিকে কাছে টেনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন পরাশক্তির সঙ্গেও এখন অনেক বেশি ঘনিষ্ঠতা ভারতের। কভিডের বর্তমান প্রবাহ শুরুর আগেও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে অনেক বেশি সখ্যতা দেখা দিয়েছে।

এর মধ্যেই কভিডের নতুন প্রবাহ ভারতকে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। ধস নামে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। বর্তমানে এ উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে করোনার আরো মারাত্মক ধরন ডেল্টার আবির্ভাব। চলমান প্রবাহের শুরু থেকেই মহামারী নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকারে ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অনেক। নয়াদিল্লির মহামারীকালীন ভূমিকা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলছে পশ্চিমা গণমাধ্যম, থিংকট্যাংক ও ভূরাজনীতির পণ্ডিতেরাও। এক্ষেত্রে অনেকটাই সামনের দিকে রয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। যদিও কিছুদিন আগেও চীনকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে মোকাবেলার জন্য নয়াদিল্লিকে তারা দেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর। ২০১৬ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট সই হয়। সামরিক রসদ সরবরাহ-সংক্রান্ত চুক্তিটি সইয়ের পর থেকেই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় উভয় দেশ আরো কয়েকটি চুক্তি সই করে। ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যকার নতুন এ সম্পর্ককে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন আখ্যা দেন ‘একবিংশ শতাব্দীর পরিকল্পিত অংশীদারিত্ব’ হিসেবে। ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড্রিলেটারাল ডায়ালগ ইনিশিয়েটিভ (কোয়াড) জোটকেও সক্রিয় করে তোলে যুক্তরাষ্ট্র।

এশিয়া টাইমসে সম্প্রতি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি বিভাগের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি এবং নেপাল সাউথ এশিয়া সেন্টারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ভীম ভুরতেল সম্প্রতি এক নিবন্ধ লিখেছেন। তাতে তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো এখন মনে করছে ভারতকে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে তারা ভুল করেছে। ভারত এখন শক্তি ও কৌশলগত দিক থেকে নিজের গুরুত্ব নিয়ে এক ধরনের ভ্রান্তির মধ্যে আছে। বিষয়টি পশ্চিমারা খুব ভালই অনুধাবন করতে পারছে। ভারতের প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে নিজেদের ভুলটিও তারা অনুধাবন করতে পারছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা, শীর্ষ আমলা, কূটনীতিক, থিংকট্যাংক ও সাংবাদিকরা প্রকৃত বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। করোনা মহামারী মোকাবেলায় মারাত্মক ব্যর্থতা ভারতের দুর্বলতাকে উন্মোচন করে দিয়েছে। এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলো ধরে নিয়েছিল ভারত ক্রমেই উন্নততর হয়ে উঠছে। চীনকে মোকাবেলার ক্ষেত্রেও দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে ভারত সম্পর্কে দেশগুলোর এ ধারণা বদলে দিয়েছে মহামারী।

গত বছর চীনে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতের শিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের অনেকেই দাবি করতে থাকেন, চীন থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদনকেন্দ্র ভারতে সরিয়ে আনবে। তবে তাদের এ প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বৈশ্বিক বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে তাদের কার্যক্রম ভারতে সরিয়ে আনেনি।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু সূচকে এখনো পিছিয়ে ভারত। গত বছরের বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে দেশটির অবস্থান ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সবার পেছনে। এমনকি কঙ্গো, ইথিওপিয়া ও অ্যাঙ্গোলার মতো আফ্রিকার ক্ষুধাজর্জরিত দেশগুলোও এদিক থেকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে।


গবেষণা সংস্থা ম্যাক্রোট্রেন্ডসের তথ্য বলছে, ভারতে এখনো প্রতি পাঁচজনে একজনের মাসিক আয় সাড়ে ৩৭ ডলারের নিচে। মাসে ১৬৫ ডলারের কম আয় করে দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ।

মহামারীর আগেও খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না ভারতের অর্থনীতি। বৈষম্যও প্রকট হয়ে উঠেছিল অনেক। দেশটিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এ বিপুল জনসংখ্যার খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশে সীমাবদ্ধ। ভারতের জনসংখ্যা ১৩৬ কোটি। স্থানীয় কর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর মধ্যে করযোগ্য আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৪৬ লাখ মানুষের। ওই সময় দেশটিতে করমুক্ত আয়সীমা ধরা হয়েছিল বার্ষিক ৬ হাজার ৭৫০ ডলারের সমপরিমাণ (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার কিছু বেশি)। অন্যদিকে দেশটিতে বার্ষিক ১০ লাখ রুপির বেশি আয় ছিল মাত্র ৪৬ লাখ মানুষের।

ভীম ভুরতেলের মতে, পশ্চিমারা ভারত বলতে প্রধানত দেশটির নগরাঞ্চলকেই চেনে। কিন্তু ভারতের ৬৫ শতাংশ নাগরিকের বসবাস গ্রামাঞ্চলে এবং বিশ্ববাসীর সামনে ভারতীয় নগরভিত্তিক জীবনযাত্রার যে চিত্র উঠে আসে, গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত চেহারা তার থেকে যোজন যোজন দূরে।

ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে। ওই সংস্কারের পর দেশটির আড়াই লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছতে সময় লেগেছে ২০১৯ পর্যন্ত। ওই বছরই দেশটিতে অনুষ্ঠিত হয় লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে তুলে নেয়া হবে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পর্যবেক্ষকদের অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যেও এ লক্ষ্য পূরণ করা ভারতের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের বিশ্বগুরু হয়ে ওঠার যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, সেটি এ মুহূর্তেও অধরাই থেকে যাচ্ছে। এস জয়শঙ্করের পশ্চিমঘেঁষা কূটনীতির কল্যাণে নরেন্দ্র মোদি বিশ্বনেতাদের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান করে নিতে পেরেছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ভোটারদের দেখাতে চেয়েছিলেন, চীনের উত্থান ঠেকাতে তিনি সক্ষম। সেটি করতে গিয়ে ভারতকে সামনে রেখে চীনের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালিয়েছেন তিনি।
এই বিভাগের আরও খবর
সৌদি আরবে ফ্যাশন শো, ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ তুঙ্গে

সৌদি আরবে ফ্যাশন শো, ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ তুঙ্গে

দৈনিক ইত্তেফাক
ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

বণিক বার্তা
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা গোনসালেসকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা গোনসালেসকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রথমআলো
২৪ নভেম্বর সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক ইমরানের, ২ মাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি ১৪৪ ধারা

২৪ নভেম্বর সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক ইমরানের, ২ মাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি ১৪৪ ধারা

মানবজমিন
মণিপুর সঙ্কটের জন্য অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

মণিপুর সঙ্কটের জন্য অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

নয়া দিগন্ত
সংবিধান পাল্টে তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হতে চান ট্রাম্প!

সংবিধান পাল্টে তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হতে চান ট্রাম্প!

ভোরের কাগজ
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া