মাছের বিষে মরছে সুন্দরবনের পাখি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বা ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি হিসেবে পরিচিত এই বন এক সময় মুখর থাকতো মদনটাক, বক, ঈগল, শঙ্খচিল, গাংচিল, মাছরাঙাসহ অন্তত ৩২০ প্রজাতির জলজ পাখির কলকাকলিতে। সুন্দরবনে যেসব পাখি বাস করে এদের মধ্যে বেশির ভাগই বুনো ফল ও মৎস্যভোজী। এসব পাখি ছাড়াও বিচিত্র ধরনের মৌসুমি পাখি সুন্দরবনে আসে।

শীত মৌসুমে সুন্দরবনের কালিরচর, পুটনিরচর, দুবলা, নীলকমল, মান্দারবাড়িয়া, কচিখালীসহ প্রায় সব এলাকায় দেশি-বিদেশি পাখির দেখা মেলে। পাখি সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবনে তিনটি পাখি অভয়ারণ্য রয়েছে।

তবে কাগজে কলমে সুন্দরবনে নানা প্রজাতির বিপুল পরিমাণ পাখি থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে সেই চিত্র ভিন্ন। প্রকৃতিপ্রেমী ও সুন্দরবনের বনজীবীরা বলছেন, আগের চেয়ে পাখির প্রজাতি ও সংখ্যা কমেছে। সুন্দরবনে বৃক্ষনিধন, বনের ভেতর দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল, চোরা শিকারিদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে সুন্দরবন থেকে অন্যত্র পাখি চলে যাচ্ছে।

এছাড়া বন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের পাখি নিয়ে গবেষণার অভাব রয়েছে। বাঘ শুমারি হলেও কখনো বনের অন্য প্রাণী বা পাখি নিয়ে আলাদা কোনো শুমারি হয়নি। পাখি নিয়ে আলাদা গবেষণার পরামর্শ তাদের।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বনের গহীনে অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। নদী দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলার কারণে এগুলো দেখা যাচ্ছে না।

মাছের বিষে মরছে পাখি
সুন্দরবনের জলজ পাখির প্রধান খাবার নদী ও খালের ছোট মাছ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনের নদী-খাল থেকে মাছ শিকার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক ও বিষ। এই বিষে মাছের পাশাপাশি খালের পানিতে থাকা বিভিন্ন পোকা-মাকড়ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত এসব প্রাণী খাবার হিসেবে গ্রহণ করে পাখি। ফলে বিষক্রিয়ায় অনেক প্রজাতির পাখি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের বনজীবীরা।

পশ্চিম সুন্দরবনের মুন্সিগঞ্জ এলাকার বনজীবী শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। বনে আগে বন মোরগ, মুরগিসহ অনেক প্রকারের পাখি দেখেছি। চার-পাঁচ বছর বনে পাখি অনেক কমে গেছে। এখানে মূলত মাছরাঙা, কানা কুয়ো, তিলানাগ ঈগল, শিকরে, টুনটুনি, চিল, বক, সারস প্রজাতির পাখি বেশি।

তিনি বলেন, হঠাৎ করেই কয়েক বছর বনে পাখি কম দেখা যাচ্ছে। বনের গভীরে গেলে মাঝে মাঝে কিছু পাখির দেখা মেলে। খালে ভেতর অনেক পাখি মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। নদীতে মরা পাখি ভেসে যেতেও দেখি মাঝে মাঝে। অনেকে খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে। সেই বিষাক্ত মাছ খেয়ে এসব পাখি মারা যাচ্ছে বলে ধারণা তার।

কদমতলা গ্রামের জেলে মুজিবর গাজী জানান, প্রায় সময় খালের মধ্যে বড় বড় বক, সারস, মদনটাকসহ মাছ খাওয়া অনেক পাখি মরে থাকতে দেখেছি। যেসব খালে বিষ দিয়ে মাছ মারা হয় ওই সব খালের মাছ খেয়ে অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। আগে বনে অনেক পাখি ছিল। এখন তেমন একটা বড় আকারের পাখি দেখা যায় না।

সাতক্ষীরা সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক গাজী সালাউদ্দিন বাপ্পি জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যক্তি সুন্দরবনের নদী ও খালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে। এজন্য সুন্দরবনের নদীতে এখন মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। খালের পানিতে বিষ দিলে শুধু মাছ মরে না পানিতে থাকা সব জলজ প্রাণীই মারা যায়। এই বিষের ক্রিয়া দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী। বিষাক্ত মাছ খেয়ে মানুষের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি অনেক প্রজাতির পাখিরও মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া বনের ভেতর দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলের কারণে অনেক পাখি বন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বেড়েছে চোরা শিকারিদের তৎপরতা।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের পাখি নিয়ে কারো কাছে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় সভা করেছি। তারা আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার জীব বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিকের আঞ্চলিক কর্মকর্তা গাজী আল ইমরান জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় গত এক দশকে আশঙ্কাজনকভাবে পাখির সংখ্যা কমে গেছে। শুধু সুন্দরবনে নয়, উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন মৎস্য ঘের ও সরকারি খালগুলোতে এখন বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করা হয়। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের কারণে পাখিসহ গোটা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। তাছাড়া মৌসুমি পাখি শিকারিরা এখন সুন্দরবন সংলগ্ন ঘের এলাকায় পাখি শিকার করছে। বনবিভাগের কর্মীরা তৎপর হলে এসব বন্ধ হবে।

সুন্দরবনে পাখি শুমারি চান সংশ্লিষ্টরা
সুন্দরবনে বর্তমানে কত প্রজাতির কত সংখ্যক পাখি আছে বা কত প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়েছে তা নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য নেই বন বিভাগ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর কাছে। সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন সুন্দরবনে মাঝে মাঝে বাঘ শুমারি হয়। কিন্তু পাখি নিয়ে কখনো কোনো শুমারি হয়নি। সুন্দরবনের পাখির সঠিক পরিসংখ্যান জানতে পাখি শুমারির দাবি তাদের।

সাতক্ষীরা ওয়াইল্ড লাইফ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা রাশেদ বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, দশ বছর উপকূলীয় এলাকায় পাখি রক্ষায় কাজ করছি। সুন্দরবন ও এই অঞ্চল থেকে অনেক প্রজাতির জলজ পাখি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। যেসব পাখি টিকে রয়েছে তারাও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে হুমকিতে রয়েছে। মাছের ঘের, নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও আম্পানে অনেক পাখি মারা গেছে। তাছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়গুলোতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পাখি শিকার করছে চোরা শিকারিরা। এসব এলাকায় বিষটোপ ব্যবহার করে ও বিভিন্ন ফাঁদ পেতে ধরা হচ্ছে বক, ডাহুক, মাছরাঙাসহ নানা প্রজাতির জলজ পাখি।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সহযোগিতায় পাখি শিকারিদের কাছ থেকে এক হাজারের অধিক পাখি উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করেছি। সুন্দরবনের পাখি নিয়ে এখনই গবেষণা ও পাখি শুমারি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এই বিভাগের আরও খবর
এপ্রিলের পূর্ণিমা, গোলাপি চাঁদের রাত

এপ্রিলের পূর্ণিমা, গোলাপি চাঁদের রাত

বিডি প্রতিদিন
‘রূপান্তর’ বিতর্কে যা বললেন জোভান

‘রূপান্তর’ বিতর্কে যা বললেন জোভান

ভোরের কাগজ
প্রাক্তন সেনাকে বিয়ে করলেন অভিন্ন শরীরের যমজ বোন

প্রাক্তন সেনাকে বিয়ে করলেন অভিন্ন শরীরের যমজ বোন

মানবজমিন
নিঝুমদ্বীপে পুকুরে পাওয়া গেল ১০ কেজি ইলিশ

নিঝুমদ্বীপে পুকুরে পাওয়া গেল ১০ কেজি ইলিশ

নয়া দিগন্ত
গাজীপুরে ৩০০ গ্রাম ওজনের শিলা

গাজীপুরে ৩০০ গ্রাম ওজনের শিলা

দৈনিক ইত্তেফাক
সবচেয়ে বেশি ও কম সময় ধরে রোজা রাখবেন যে দেশের মানুষ

সবচেয়ে বেশি ও কম সময় ধরে রোজা রাখবেন যে দেশের মানুষ

জনকণ্ঠ
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়