মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ‘ওষুধ’: ভেতরে কেঁচো নাকি সাপ?

ফেসবুকে হাজার হাজার পেজ খুলে ‘এক মাসে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানোর’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা ও অবৈধ পথে টাকা আয়ের অভিযোগ মিলেছে। এসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হওয়ার কথা অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, ‘ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ক্যাপস্যুল, গ্রিন কফি, গ্রিন টি, নানারকম ওয়েট কমানো জুস খেলে কোনও ব্যায়াম বা ডায়েট ছাড়াই কমবে ওজন’—এমন চটকদার অফারে সয়লাব হোমপেজ। যদিও এদের কিছু কিছু পণ্যের অনুমোদন আছে। তবে ঠিক এই ধরনের অফার দিয়ে বিক্রয় হবে—সে তথ্য লুকিয়ে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

একাধিক পণ্যের গায়ে ডিএআর নম্বর দেওয়া থাকলেও ওষুধ প্রশাসনের ওয়েবসাইটে সেই নম্বরের অস্তিত্ব নেই। ওষুধ, খাদ্যপণ্য, পানীয় অনুমোদন দেয় যেসব প্রতিষ্ঠান তারা বলছে, এসব পণ্য অনুমোদন নেওয়ার সময় ঠিক কী কাজে ব্যবহার হবে তার জায়গায় যদি এরকম এক সপ্তাহে ওজন কমানোর কথা উল্লেখ থাকে তবে তার অনুমোদন মেলার কথা না। ফলে একটি প্রতারক গোষ্ঠী এক কথা বলে অনুমোদন নিয়ে আরেক কথা বলে এ ধরনের কাজ করছে—এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, একমাসে এই পরিমাণ ওজন কমাতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তার সাইডইফেক্ট থাকবে না, এটা হতেই পারে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধের অনুমোদন থাকলেও বিক্রি করা অপরাধ।

অফার দেখেই  প্রতারণা চেনা যায়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে বিস্ময়কর  তথ্য। ৫৫টি পেজ পর্যবেক্ষণ করে এবং ১১টি পেজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পণ্যের চাহিদা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। একইসঙ্গে তারা স্কিন কেয়ার ক্যাপসুল দেয়, সেটার কারণে বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে। পেজগুলোর বিজ্ঞাপনের ভাষা কমবেশি একই রকম।

সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন দেখা যায় সেই স্লিমিং সফট ড্রিংকের। এ বিষয়ে পেজগুলোর দাবি, ‘এটি ১ মাসে সর্বোচ্চ ৮-১০ কেজি ওজন কমাবে। পুরো শরীর এবং পেটের চর্বি কমাবে। ডায়েট ও ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমাবে’।

কী পদ্ধতি কাজ করবে জানতে চাইলে পেজগুলো থেকে বলা হয়, ‘খাবারকে দ্রুত হজম করবে এবং ফ্যাট বার্ন করবে। পেটের বিষাক্ত গ্যাস দূর করবে। বডির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত চর্বি ও টক্সিন বার্ন করে টয়লেটের মাধ্যমে বের করে দিবে’।

কোথায় থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে—প্রশ্নে কোনও কোনও পেজ বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) থেকে পরীক্ষা করার একটি সার্টিফিকেট দিয়ে জানায় এতে সাইডইফেক্ট নেই।

যোগাযোগের সময় তারা তাদের পণ্যের সাইডইফেক্ট না থাকার সনদ, তাদের পণ্য খেয়ে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমেছে—এমন অনেকের ফেসবুক কমেন্ট এবং তাদের পণ্য ব্যবহার করে খুব খুশি হয়েছে এমন অনেকের ইনবক্স কথোপকথনের স্ক্রিনশট দিয়ে আশ্বস্ত করে। কিন্তু পণ্যের মান ও এর বৈধতা নিয়ে যত বেশি অনুসন্ধানে করা যায় ততই যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার অবস্থা তৈরি হয়। এমনকি একই প্রোডাক্ট  বিক্রির জন্য একেকটি গোষ্ঠী একাধিক পেজ খুলেছে। পণ্য বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেওয়া ফোন নম্বর একই হওয়ায় সেটি সহজেই নজরে আসে।

কেউ বলছে, ‘মেদ ভুঁড়ি ওজন স্থায়ীভাবে না কমলে শতভাগ মানিব্যাক গ্যারান্টি’। কেউ বলছে, ‘তার পণ্য বাংলাদেশ সাইন্সল্যাব কর্তৃক অনুমোদিত’। কেউ দিচ্ছে ৩০ শতাংশ ছাড়ে সারা বাংলাদেশে হোম ডেলিভারি। মানুষকে দৌড়াতে হবে না, খাবার সীমিত করতে হবে না, ব্যায়ামও করতে হবে না, কেবল নিয়ম করে ওষুধ খেতে হবে আর চর্বিযুক্ত খাবার অ্যাভয়েড করতে হবে। একবার ওজন কমলে তারপরে আর বাড়বেও না। এমনকি ওজন কমানোর কারণে যেন স্কিনে প্রভাব না পড়ে সেজন্যও তারা ক্যাপসুলের অফারও দিয়ে দিচ্ছে।

এই গোষ্ঠীর সবকিছুই প্রতারণা বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। যথাসময়ে বন্ধ না করা গেলে এর পরিণতি খারাপ হবে বলেও আশঙ্কা তাদের। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন বলেন, কীভাবে ওজন কমাতে হবে তা সাধারণত পুষ্টিবিদরা একটা নির্দেশনা দিয়ে দেন। কোনও প্রেসক্রিপশন ছাড়া, পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবে হঠাৎ ওজন কমলে তার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে। কিডনি, লিভারসহ নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর স্কিনের কোনও ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া বা ব্যবহার বিপজ্জনক। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। 

বিএসটিআইআর আবার কোন প্রতিষ্ঠান?

একটি পেজ থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপনে বলা হয় একটি জুসের কথা। যা খেলে সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১০ কেজি আর সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজন কমানো যাবে। এটি ‘বিএসটিআইআর’ অনুমোদিত এবং পরীক্ষিত।

অথচ এই নামে অনুমোদনদানকারী কোনও প্রতিষ্ঠান নেই। ইনবক্সে অনুমোদনের প্রতিষ্ঠানের নাম জিজ্ঞেস করলে আবারও এই একই উত্তর মেলে।

বিএসটিআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এই পণ্য অনুমোদন দেওয়ার কোনও সুযোগ তাদের নেই। প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যদি ওষুধ হয়ে থাকে তাহলে ওষুধ প্রশাসন ও যদি লিকুইড হয়ে থাকে তাহলে হয়তো নিরাপদ খাদ্য থেকে দিতে পারে। আমাদের এখান থেকে এসবের কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এই বিভাগের আরও খবর
পাকা পেঁপের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কি?

পাকা পেঁপের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কি?

কালের কণ্ঠ
হিমোফিলিয়া শনাক্তের বাইরে ৮২% রোগী

হিমোফিলিয়া শনাক্তের বাইরে ৮২% রোগী

কালের কণ্ঠ
খাবারে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়

খাবারে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়

কালের কণ্ঠ
ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, মেধাক্রমে প্রথম তামিম

ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, মেধাক্রমে প্রথম তামিম

সমকাল
স্যালাইন খেয়ে শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৪

স্যালাইন খেয়ে শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৪

জনকণ্ঠ
অভিযান চালিয়ে হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘না’

অভিযান চালিয়ে হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘না’

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়