যুদ্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা, লেবানন সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল

সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় গাজায় ট্যাংক ও সেনা সমাবেশের পর এবার লেবানন সীমান্ত খালি করছে ইসরায়েল। হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর হামলার মুখে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। লেবানন সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ২৮টি গ্রাম থেকে গতকাল বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এর আগের দিন রোববার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে উত্তরে লড়াইয়ের আরেকটি ক্ষেত্র উন্মুক্ত হতে পারে। তাতে ইরানের জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।’ 

লেবানন সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি গ্রাম শতুলায় গত রোববার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। দেশটি বলছে, গাজায় তাদের দেশের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করতে ইরানের নির্দেশে হিজবুল্লাহ এ হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি ইরানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। যদিও এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘দুই বা ততোধিক যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ের জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত।’ তবে লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে মিলে নতুন ফ্রন্ট তৈরি হলে তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। 

ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর অপারেশন আল আকসা ফ্লাড নামে অভিযান পরিচালনা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর পর থেকে অঞ্চলটিতে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে আইডিএফ। গাজায় এমন হামলা ক্ষুব্ধ করে তোলে হামাস মিত্রদের। আশঙ্কা তৈরি হয় যুদ্ধ আরো বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার। একপর্যায়ে গাজার বাইরে সহিংসতা না ছড়াতে হামাসের মিত্র ইরানের প্রতি আহ্বান জানায় পাঁচ দেশ। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইতালি। ৯ অক্টোবর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সমালোচনা করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘ওয়াশিংটন ইসরায়েলে তার পুতুলকে (নেতানিয়াহু) রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। এ যুদ্ধের পরিধি বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।’ কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গতকাল দেশটির পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, হামাসের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমাদের চাপে দলটির নিন্দা জানাবে না তার দেশ। 

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণ বন্ধের দাবিতে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন দেশের রাজপথে নেমে এসেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, গ্রিস, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি, নেদার‍ল্যান্ডস, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভেনেজুয়েলা, ডেনমার্ক, ইরান, ইরাক, তুরস্ক, লেবানন, মিসরের বিক্ষোভ থেকে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানায় বিক্ষোভকারীরা। কানাডার হ্যামিল্টনের সিটি হলের বাইরে গত রোববার ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সমবেত হয় কয়েকশ মানুষ। এ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে কানাডা সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানায় তারা। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো গণহত্যাকারী এবং নিপীড়কদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছু সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আর হামাস সব ফিলিস্তিনির প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে হবে।’ সিবিএস সিক্সটি মিনিটস শীর্ষক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজের এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি গত রোববার প্রচারিত হয়। 

গাজা দখল করাটা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় ভুল হবে বলেও মন্তব্য করেন বাইডেন। তার মতে, একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একটি পথ খোলা থাকা প্রয়োজন। 

ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী বহর সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল অভিমুখে যাত্রা করেছে। তবে সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলের অন্যতম ‘‌‍সেরা লড়াকু বাহিনী’ থাকায় মার্কিন সেনাদের স্থলভাগে নামার প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন তিনি।

যুদ্ধের ডামাডোলে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তীব্রতর হচ্ছে মানবিক সংকট। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর মানুষের আর্তনাদ। হাসপাতালে হতাহতদের স্বজনের আহাজারি। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিদ্যুৎ না থাকায় মজুদ জ্বালানি দিয়ে কোনোভাবে জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে মজুদ থাকা জ্বালানিও শেষের পথে। সহসাই এটি শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের। 

গাজার আল-কুদস হাসপাতাল এলাকায় গতকাল বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আক্রান্ত হয়েছে সিভিল ইমার্জেন্সি ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের অফিসও। 
এই বিভাগের আরও খবর
গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরো ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরো ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত

নয়া দিগন্ত
সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, পাস হলো বিল

সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, পাস হলো বিল

জনকণ্ঠ
নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান

নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান

নয়া দিগন্ত
যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ
ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ভোরের কাগজ
আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

মানবজমিন
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়