রোহিঙ্গা বিতাড়নে ২০১৭ সালকে মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিল বর্মি সেনাবাহিনী

২০১৭ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ শুরু করে বর্মি সামরিক বাহিনী (তাতমাদো)। জঙ্গিবাদে অভিযুক্ত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দমনের অজুহাতে শুরু করা ওই অভিযানে বাস্তুচ্যুত হয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীটির ওপর তাতমাদোর এ নির্মম নিপীড়নকে দেখা হচ্ছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ ও ‘গণহত্যা’ হিসেবে। নানা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে স্থায়ীভাবে বিতাড়নের উদ্দেশ্যেই অভিযানটি শুরু করেছিল তাতমাদো।

বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে ২০১৭ সালটি ছিল মারাত্মক অস্থিরতার বছর। বিশেষ করে বছরের দ্বিতীয়ার্ধটি দুই গোলার্ধই উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ভুটান সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় সড়ক ও স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ তখন চরমে। যেকোনো সময়ে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও তখন ভূরাজনৈতিক নানা অস্থিরতার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা চরমে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মনোযোগও  চীন ও উত্তর কোরিয়ার ওপর পুরোপুরি নিবদ্ধ। এমন মুহূর্তেই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে তাতমাদো।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অনেক হিসাব-নিকাশের পরই রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল তাতমাদো। প্রায় যুযুধান ভারত বা চীনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো ধরনের বাধা আসার সম্ভাবনা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রও তখন কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। দেশটির যাবতীয় কূটনৈতিক তত্পরতা তখন শুধু উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনকেন্দ্রিক। পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে আংশিক গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের শীতলতা কিছুটা দূর হয়েছিল।

কূটনৈতিক অগ্রাধিকার বদলে যাওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ওয়াশিংটন ও নেপিদোর মধ্যে দূরত্বও বেড়ে যায়। দেশটি নিয়ে ওয়াশিংটনের ঔদাসীন্য বাড়তে থাকে। বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবেই নেয় তাতমাদো।

এশিয়ার অর্থনৈতিক জায়ান্ট জাপানের কাছ থেকেও বাধার সম্ভাবনা ছিল কম। আগেও দীর্ঘদিন পশ্চিমা বিধিনিষেধের মধ্যে মিয়ানমারকে কূটনৈতিক ও আর্থিক সুরক্ষা দিয়ে এসেছে জাপান। মিয়ানমারকে নিজের প্রভাব বলয়ের মধ্যে আনতে চীনের সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছিল দেশটি। চীন ও জাপানের প্রশ্রয়ও মিয়ানমারের জেনারেলদের জন্য অনেক বড় সুযোগ ছিল।

অভ্যন্তরীণভাবেও পরিস্থিতি ছিল অনুকূলে। মিয়ানমারে তখন গণতান্ত্রিক রূপান্তর শুরু হলেও তা ছিল আংশিক। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বর্মি পার্লামেন্টে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল তাতমাদো। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারও তাতমাদোর বিরোধিতা করার কোনো অবস্থানেই ছিল না। নেপিদোয় অং সান সু চির দল সরকার গঠন করলেও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছিল তাতমাদোর হাতে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করার জন্য তাতমাদো খুবই মোক্ষম একটি সময় বেছে নিয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের নানা পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। হামলা শুরুর পরও দেখা গিয়েছে, অং সান সু চি এ ইস্যুতে তাতমাদোর ন্যূনতম বিরোধিতা না করে বরং তাদের পক্ষ নিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের ওপর বর্মি সেনাবাহিনীর নিপীড়নের ঘটনা এটিই প্রথম ছিল না। অতীতেও জাতিগত সহিংসতা ও তাতমাদোর নিপীড়নের মুখে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে জাতিগোষ্ঠীটির ওপর নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে বেশি। তবে তীব্রতা, মাত্রা ও ভয়াবহতার দিক থেকে ২০১৭ সালের আক্রমণটি ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভিন্ন।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের হিসাব অনুযায়ী, বর্মি সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর এক মাসের মধ্যেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে অনেককেই পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগও এসেছে অসংখ্য।

২০১৯ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার জন্য সরাসরি মিয়ানমার রাষ্ট্রকেই দায়ী করেছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ওই সময় বলা হয়, মিয়ানমার রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে জাতিগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে গণহত্যা অব্যাহত রাখার মতো মনোভাবও ধরে রেখেছে।
এই বিভাগের আরও খবর
সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, পাস হলো বিল

সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, পাস হলো বিল

জনকণ্ঠ
নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান

নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান

নয়া দিগন্ত
যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ
ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ভোরের কাগজ
আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

মানবজমিন
ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

কালের কণ্ঠ
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়