কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখতে যাওয়া নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দিতে বালুচরে আলাদা জোনের উদ্বোধন করে ১১ ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হয়। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে উর্মি গেস্টহাউস থেকে সিগাল পয়েন্ট পর্যন্ত ১৫০ ফুট এলাকার বালুচরকে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা এই জোন করা হয়েছিল। গতকাল বুধবার সকালে এই জোনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। সে সময় বলা হয়, পরিবারের সঙ্গে আসা নারী ও শিশুরা চাইলে সৈকতের যেকোনো স্থানে ভ্রমণ করতে পারে। কিন্তু যেসব নারী ও শিশু একা এসে সৈকত দর্শন করে তাদের ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ উপহার দিতে এই আলাদা জোন করা হয়েছে।
নারী ও শিশুদের এভাবে আলাদা গণ্ডির মধ্যে রেখে নিরাপত্তাব্যবস্থা করায় অনেকে প্রশ্ন তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে বিরূপ সমালোচনা চলতে থাকে। পরে গত রাত ১০টায় ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়।
নারীদের জন্য সমুদ্রসৈকতে এ ধরনের আলাদা জোন প্রত্যাহারের আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও উন্নয়নকর্মী রাশেদা কে. চৌধূরী গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি যে আমলে নিয়েছে, এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে অস্বীকার করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে নারী ও শিশুরা যে সেখানে নিরাপদ নয়, তা স্বীকার করা হয়েছে। তারা তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি খণ্ডিত। কিন্তু এর মাধ্যমে নারীদের গণ্ডির মধ্যে রেখে কতখানি, কত দিন নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব? আর এর মাধ্যমে নারীদের মানবাধিকারকে অস্বীকৃতি জানানো হলো। শুধু নারীদের লাঞ্ছনা থেকে রক্ষার উপায় খোঁজার চেষ্টা কেন?
যেকোনো পর্যটক যেন সেখানে লাঞ্ছিত না হয়, সে ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। নারী ও শিশুরা তো দেশজুড়েই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকে। এ অবস্থায় দেশজুড়েই কি তাদের জন্য এ ধরনের গণ্ডির ব্যবস্থা করা হবে?’
মানবাধিকারকর্মী ও নারী নেত্রী খুশী কবির বলেন, ‘এটি অদ্ভুত উদ্যোগ। একেবারে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা। দেশে নারীরা যখন নিজেদের ঘরেই নিরাপত্তা পায় না, সেখানে সমুদ্রসৈকতে তাদের জন্য আলাদা জোন করে নিরাপত্তা কিভাবে দেওয়া হবে?’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘কক্সবাজারে সম্প্রতি যে নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে, তিনি সেখানে তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছিলেন। তার পরও তিনি রক্ষা পাননি। এ অবস্থায় একাকী নারীদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা জোন করে কী লাভ? সব পর্যটকের জন্যই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক নারী-পুরুষ কক্সবাজারে বেড়াতে আসে। সমুদ্রে নারী-পুরুষ একসঙ্গে গোসল করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা বিব্রতবোধ করে। স্বস্তি ও নিরাপদে সমুদ্রস্নানের সুবিধার্থে নারীদের জন্য এই বিশেষ জোন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রক্ষণশীল নারী পর্যটক যারা আছে, তারা এই জোন থেকে সমুদ্রে নেমে স্বাচ্ছন্দ্যে গোসল করতে পারবে।
তিনি আরো বলেছিলেন, নারী ও শিশুদের জন্য তৈরি করা এই জোনে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নারী ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য ও নারী বিচকর্মী নিয়োজিত থাকবেন।
গতকাল সকালেই সৈকতের নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার রফিকুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মহিউদ্দিন উদ্দিন আহমেদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আবছার উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাজশাহী থেকে সৈকতে বেড়াতে এসেছেন পর্যটক আনোয়ার হোসেন ও রেখা দম্পতি। রেখা বলেন, ‘আলাদা জোনে আমি গিয়েছি। কিন্তু সেখানে আমার স্বামীকে ছাড়া গোসল করা অসম্ভব।’
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়