আফগানিস্তানে উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা নারীদের জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
১৫ বছর তালেবানের সাংস্কৃতিক বিষয়াদির সাথে যুক্ত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগ পাওয়া চ্যান্সেলর মোহাম্মদ আশরাফ ঘাইরাত সোমবার টুইট করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসাবে আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যতদিন না সবার জন্য যথাযথ ইসলামি পরিবেশ নিশ্চিত না করা হবে, ততদিন নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবেন না। সবকিছুর আগে ইসলাম।’
এর আগে, শনিবার যখন আফগানিস্তানে অনেকদিন পর সরকারি মাধ্যমিক স্কুল খোলে, শুধু ছেলে শিক্ষার্থীরাই যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে। মেয়েরা কবে স্কুলে যেতে পারবে তা এখনও অনিশ্চিত।
অথচ তাদের ক্ষমতা দখলের পর গত দেড় মাস ধরে তালেবানের ওপর আন্তর্জাতিক মহল থেকে, বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছ থেকে যেসব দাবি-শর্ত দেয়া হচ্ছে তার অন্যতম নারী শিক্ষা এবং তাদের কাজের অধিকার।
এমনকি যে দেশটির সমর্থন-স্বীকৃতি তালেবানের জন্য এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও কয়েকদিন আগে আফগানিস্তান এবং তালেবান নিয়ে বিবিসির সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, নারী শিক্ষা বন্ধ করা অনৈসলামিক হতে পারে। পাকিস্তানের কাছ থেকে তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি যে শর্তসাপেক্ষ তা তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন।
কিন্তু বাইরের এসব কথায় আদৌ যে তালেবান কান দিচ্ছে তার কোনো লক্ষণ নেই। বরঞ্চ তালেবানের কাছ থেকে জোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের শিক্ষা নিতে হবে আলাদাভাবে এবং শুধু নারী শিক্ষকরাই তাদের পড়াতে পারবেন। আফগানিস্তান নারী শিক্ষকের সংখ্যা এতই কম যে তাতে এমনিতেই মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ কমে যেতে বাধ্য।
‘এ দফায় বিদেশিদের সাথে সম্পর্কে অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছে তালেবান, কিন্তু বিদেশিদের কথাবার্তা তারা শুনছে না। কখনই তারা শোনেনি। আপনি নারী শিক্ষা বলুন, সঙ্গীত বলুন আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার তরিকা বলুন তারা তাদের পুরনো বিশ্বাস আদর্শ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন লন্ডনে আফগান সাংবাদিক এবং আফগান রাজনীতির বিশ্লেষক সৈয়দ আব্দুল্লাহ নিজামী।
তিন দিন আগে হেরাত শহরে চারজন সন্দেহভাজন অপহরণকারীকে মেরে লাশ রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তার দুদিন আগে আমেরিকান বার্তা সংস্থা এপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের একজন সিনিয়র নেতা চুরি-ডাকাতির অপরাধে হাত কাটার বিধান চালুর পক্ষে কথা বলেন। অথচ তালেবান জানে দেশ চালানোর জন্য যাদের সাহায্য এবং স্বীকৃতি তাদের জন্য জরুরি তারা এসব পছন্দ করবে না।
নিজামী বলেন, কাবুল দখলের আগে বা পরপরই যে সব তালেবান নেতার মুখের কথা শুনে মনে হচ্ছিল গত ২০ বছরের তাদের চিন্তা-চেতনায় হয়ত বেশ পরিবর্তন হয়েছে, তারা কেউই ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে পারেননি। ‘যারা এসেছেন তারা তাদের পুরনো মত-পথ থেকে সরেননি এবং চাপ দিয়ে তাদের নড়ানো কঠিন।’
যে দেশটির জিডিপির ৪০ শতাংশই পশ্চিমা সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, সেই সাহায্য গত দেড় মাস ধরে বন্ধ। আফগানিস্তানের ১০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমেরিকা আটকে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ আফগানিস্তানের জন্য তাদের জরুরি ঋণের নির্ধারিত কিস্তি স্থগিত করে দিয়েছে।
আটকে দেয়া এসব টাকা এখন তালেবানের ওপর প্রভাব খাটানোর জন্য আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রধান অস্ত্র। তারা বলছে, নারীদের শিক্ষা এবং কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নারী এবং আফগান সমাজের বিভিন্ন অংশকে ক্ষমতার ভাগ দিতে হবে।
এমনকি পাকিস্তান, রাশিয়া, ইরান সহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকেও স্বীকৃতি এবং সমর্থনের শর্ত হিসাবে সরকারে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী, সংখ্যালঘু এবং নারী প্রতিনিধিত্বের দাবি করা হয়েছে।
স্বীকৃতির জন্য তৎপর তালেবান
কাবুলে বিদেশি, বিশেষ করে প্রভাবশালী কয়েকটি আঞ্চলিক দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সাহায্য স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলতে তালেবান তৎপর। প্রতিদিনই বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশিদের দেয়া শর্ত নিয়ে তালেবানের কাছ থেকে কোনো কথা বা প্রতিশ্রুতি নেই।
‘বিশেষ করে সরকারে কারা থাকবে, কী থাকবে না - তা নিয়ে কোনো কথা তালেবান শুনতে চায় না। আমেরিকানদের সমর্থনে যেসব সরকার ছিল তাদের তালেবান বিশ্বাস করে না। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের ধারণাই তারা মানে না,’ বলেন নিজামী, ‘তাদের কথা - এটি একটি ইসলামি সরকার, এর সাথে জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সম্পর্ক নেই।’
সরকারে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সম্প্রতি তাজিকিস্তানের কাছ থেকে এক বিবৃতি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ তালেবান। বিবিসি পশতু বিভাগের সাথে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র আহমেদুল্রাহ ওয়াসিক বলেন, ‘যে তাজিকিস্তান আমাদের জন্য সমস্যা তৈরিতে ব্যস্ত তারা আমাদের সরকারের কাঠামো নিয়ে কথা বলার কে? তাদের উচিৎ নিজেদের সমস্যা সমাধান করা। আমাদের সরকার কেমন হবে তা নিয়ে বিদেশিদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।’
প্রতিবেশীরাই তালেবানের ভরসা
কিন্তু স্বীকৃতি ছাড়া দেশ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থকড়ির সংস্থান কিভাবে করবে তালেবান?
আব্দুল্লাহ নিজামী বলছেন তালেবান ভরসা করছে আঞ্চলিক কয়েকটি দেশের ওপর – চীন রাশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তান এবং সেই সাথে কাতার। ‘আফগানিস্তানে নারী অধিকার, নারী শিক্ষা নিয়ে এসব দেশের তেমন কোনো চিন্তা নেই । তালেবান মনে করে এসব দেশে তাদের কৌশলগত স্বার্থ নিয়েই বেশি উৎসাহী।’
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়