হেপাটাইটিস প্রতিরোধে যা করণীয়

সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সাধারণ জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল ও দুরারোগ্য অসুখ হতে পারে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন

‘হেপাটাইটিস’ কী?

লিভারের যেকোনো ধরনের প্রদাহজনিত অসুখকে ‘হেপাটাইটিস’ বলে। মূলত ‘হেপাটাইটিস ভাইরাস’ দ্বারা লিভারের প্রদাহজনিত অসুখ হয়ে থাকে।

ভাইরাস সংক্রমণের ফলে লিভারের প্রদাহজনিত অসুখকে ‘ভাইরাল হেপাটাইটিস’ বলে।

সমস্যা

হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘ই’—মূলত এই পাঁচ ধরনের ভাইরাস ‘হেপাটাইটিস’ করে থাকে। সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানে না যে তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি হেপাটাইটিস ‘বি’ অথবা ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জীবন হারাচ্ছে।

হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সাধারণ জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল ও দুরারোগ্য অসুখ হতে পারে।

‘হেপাটাইটিস’ কয় ধরনের এবং এগুলোর লক্ষণ/উপসর্গ কী কী?

হেপাটাইটিস মূলত দুই ধরনের।

‘একিউট হেপাটাইটিস’ বা ক্ষণস্থায়ী হেপাটাইটিস

সাধারণত হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ই’ ভাইরাস দিয়ে ‘একিউট হেপাটাইটিস’ হয়ে থাকে। একিউট হেপাটাইটিস সাধারণত জন্ডিস, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা, পেটে অস্বস্তিবোধ, বমিভাব ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে উপস্থাপন করে। একিউট হেপাটাইটিস বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের ভেতর সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়।

‘ক্রনিক হেপাটাইটিস’ বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস

হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমণের ফলে লিভারে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফলে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস থেকে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য অসুখ হতে পারে।

লিভার সিরোসিসের লক্ষণগুলো কী কী?

♦ শরীর দুর্বল লাগা।

♦ জন্ডিস হওয়া।

♦ পেটে এবং পায়ে পানি এসে ফুলে যাওয়া।

♦ রক্তবমি হওয়া।

♦ আলকাতরার মতো কালো নরম পায়খানা হওয়া।

♦ অজ্ঞান হয়ে পড়া ইত্যাদি লিভার সিরোসিসের প্রধান লক্ষণ। প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গহীনভাবেও থাকতে পারে।

প্রতিরোধ

হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস সাধারণত এই ভাইরাসগুলো সংক্রমিত ব্যক্তির মল দ্বারা পানি, খাবার দূষিত হলে এসবের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই এই দুই ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য চাই বিশুদ্ধ পানি, খাবার, উন্নতমানের বর্জ্য ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন।

হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস

এই দুই ভাইরাস প্রধানত রক্তের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মাঝে ছড়ায়। এ ছাড়া জন্মের সময় সংক্রমিত মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে, অনিরাপদ যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এবং একজনের টুথব্রাশ, নেইল কাটার, রেজর আরেকজন ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনের মাঝে ছড়ায়। খাবার, পানি এবং স্পর্শ অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস ছড়ায় না।

ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’ ইনফেকশন কী পূর্ণবয়স্ক মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণত কোনো ওষুধপত্র ছাড়াই ছয় মাসের মধ্যে তা শরীর থেকে নির্মূল হয়ে যায়। বাকি প্রায় ১০ শতাংশ মানুষের ভেতর এই ভাইরাস ছয় মাস পরও থেকে যায়। অন্যদিকে জন্মের সময় মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস প্রবেশ করলে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জীবাণুটি সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। জীবাণু শরীরে প্রবেশের ছয় মাস পরও থেকে যাওয়া অবস্থাকেই ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’ ইনফেকশন বলে। এই ক্রনিক ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের একটি অংশ পরবর্তী সময়ে ‘লিভার সিরোসিস’ ও ‘লিভার ক্যান্সার’ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ওষুধ দ্বারা হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস একেবারে নির্মূল করা না গেলেও একে নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বাংলাদেশে সহজলভ্য।

ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘সি’ ইনফেকশন কী

হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ছয় মাস পরও তা শরীরে সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া এই ‘সি’ ভাইরাসকেই ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস বলে এবং ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরাই পরবর্তী সময়ে ‘লিভার সিরোসিস’ ও ‘লিভার ক্যান্সার’-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। মাত্র ১২ সপ্তাহ মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসকে একেবারে নির্মূল করা সম্ভব।

‘হেপাটাইটিস’ প্রতিরোধের কার্যকর টিকা আছে কি?

হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের কার্যকর টিকা না থাকলেও শতভাগ কার্যকর ওষুধ আছে। হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাসের টিকা কোনো কোনো দেশে চালু থাকলেও পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই এখনো সর্বজনস্বীকৃত টিকা চালু নেই।

হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা কখন নেওয়া যায়?

নবজাতকের ক্ষেত্রে জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ‘বি’ ভাইরাসের টিকা দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে ইপিআই ভ্যাকসিনের সঙ্গে নবজাতকদের হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ চাইলে যেকোনো বয়সে যেকোনো সময় হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা নিতে পারে। মনে রাখতে হবে, হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা শুধু জন্ডিসকেই প্রতিরোধ করে না, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারকেও প্রতিরোধ করে। শূন্য, এক ও ছয় মাস ব্যবধানে একটি করে মোট তিনটি হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা নিতে হয়।
এই বিভাগের আরও খবর
হিমোফিলিয়া শনাক্তের বাইরে ৮২% রোগী

হিমোফিলিয়া শনাক্তের বাইরে ৮২% রোগী

কালের কণ্ঠ
খাবারে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়

খাবারে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়

কালের কণ্ঠ
ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, মেধাক্রমে প্রথম তামিম

ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, মেধাক্রমে প্রথম তামিম

সমকাল
স্যালাইন খেয়ে শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৪

স্যালাইন খেয়ে শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৪

জনকণ্ঠ
অভিযান চালিয়ে হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘না’

অভিযান চালিয়ে হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘না’

বাংলা ট্রিবিউন
ব্লাড ক্যানসার কেন হয়, নির্ণয়ের উপায় ও চিকিৎসা কী?

ব্লাড ক্যানসার কেন হয়, নির্ণয়ের উপায় ও চিকিৎসা কী?

প্রথমআলো
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়