৫০%-এর বেশি আমদানি হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

বাংলাদেশের মোট রফতানি পণ্যের ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। এর কাঁচামাল সরবরাহকারী হিসেবে দেশের বৃহৎ শিল্পের বড় অংশজুড়েই আছে বস্ত্র খাত।  এ শিল্পের মিল বা কারখানাগুলোয় উৎপাদিত কাঁচামাল সুতা ও কাপড়ের সিংহভাগই তুলাজাত। ফলে দেশের শিল্প কর্মযজ্ঞের মূল উপকরণ বলা যায় তুলাকে।  দেশে এর উৎপাদন সক্ষমতা যদিও চাহিদার তুলনায় নগণ্য। তাই প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। 

বর্তমানে দেশে প্রতি বছর তুলার চাহিদা কম-বেশি ৮৫ লাখ বেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তুলা আনা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই ভারতনির্ভর ছিল বাংলাদেশ। কালক্রমে সে উৎসে পরিবর্তন এসেছে। চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই ভারতের স্থান দখল করে নিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো। বর্তমানে আমদানীকৃত তুলার ৫০ শতাংশের বেশিই আসছে এসব দেশ থেকে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আফ্রিকার তুলা বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখছে সৌদি আরবের জেদ্দাভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। ঋণদাতা এ সংস্থাটির অর্থায়ন সুবিধা কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়ার ক্ল্যাং বন্দরে ওয়্যারহাউজ গড়ে তুলেছেন আফ্রিকা অঞ্চলের তুলা রফতানিকারকরা। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী সাতদিনের মধ্যেই তুলা আনতে পারছেন দেশের আমদানিকারকরা। তৃতীয় একটি দেশের বন্দর ব্যবহারের এ সুবিধাই বাংলাদেশের তুলা আমদানির উৎস পরিবর্তনের মূল অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে গুদামজাত করে তুলা রাখার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা রয়েছে। ইনভেন্টরিতে ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেড়ে যায়। এ কারণে তৃতীয় একটি দেশের বন্দরের ওয়্যারহাউজ ব্যবহার করা হয়। আফ্রিকা অঞ্চল থেকে যারা তুলা রফতানি করেন তাদের অনেকেরই মালয়েশিয়ার ক্ল্যাং বন্দরে ওয়্যারহাউজ আছে। শিপাররা বাংলাদেশের চাহিদা বিবেচনায় সেখানে তুলা গুদামজাত করেন। মাত্র সাতদিনের মধ্যে তা নিয়ে আসা যায়। মূলত এ সুবিধার কারণেই আফ্রিকা অঞ্চল থেকে পণ্যটির আমদানি ক্রমেই বাড়ছে।’

বাংলাদেশের তুলা আমদানির গতি-প্রকৃতিকে বিপণন বর্ষভিত্তিক (আগস্ট থেকে জুলাই) হিসাব করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে ইউএসডিএ বলছে, ২০২২-২৩ বিপণন বর্ষে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে, যা মোট চাহিদার ৩৯ শতাংশ। ৯ শতাংশের উৎস ছিল ক্যামেরুন। ৩ শতাংশ আমদানি হয় শাদ থেকে। এ হিসেবে মোট তুলা আমদানির ৫১ শতাংশই হয়েছে আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো থেকে। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল থেকে আমদানি হয়েছে ১৬ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলা আসে ১২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১০ শতাংশ তুলা। 

আফ্রিকা অঞ্চলে উৎপাদিত তুলার গুণগত মান বেশ ভালো বলে জানান বস্ত্র খাতসংশ্লিষ্টরা। মানের পাশাপাশি সময় ও প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণেও এ অঞ্চল থেকে তুলা আমদানি বাড়ছে বাংলাদেশে। মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ক্যামেরুনের তুলার মান বেশ ভালো। তারপর শাদ ও মালির তুলাও ভালো। তবে আফ্রিকার তুলা আমদানি বেড়ে যাওয়ার আরো একটি কারণ হলো আফ্রিকান কটন অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সদস্যদের আইডিবির পক্ষ থেকে বিশেষ অর্থায়ন ব্যবস্থার সুবিধা দেয়া হয়। ফলে তারা ভালো মানের তুলা প্রতিযোগিতামূলক দামে ও কম সময়ে রফতানি করতে পারছে। সে সুবিধাটাই নিতে পারছেন বাংলাদেশের মিল মালিকরা।’ 

তুলা আমদানির বড় গন্তব্য অবশ্য আফ্রিকা ছিল না। একসময় উজবেকিস্তানের তুলা জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল বাংলাদেশে। কিন্তু শিশুশ্রমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সে উৎস থেকে সরে আসতে হয়। মূল্য ও আমদানির সময় বিবেচনায় একসময় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল ভারত। যদিও দেশটির তুলাজাত সুতা-কাপড়ের মান ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটাতে গিয়ে রফতানি নিষেধাজ্ঞার মতো অশুল্ক বাধাও আসত দেশটির পক্ষ থেকে। এসব জটিলতায় বিকল্প উৎস হিসেবে কালক্রমে আফ্রিকার তুলার চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশে। 

বিটিএমএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাংলাদেশ মোট তুলা আমদানি করে ৫২ লাখ বেল। এর মধ্যে ভারত থেকে আসে ১১ লাখ বেলের বেশি। এ হিসাবে সে বছর ২২ শতাংশ তুলা আমদানি হয়েছে প্রতিবেশী দেশটি থেকে। ২০১৫ সালে মোট ৬১ লাখ বেল তুলা আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ভারত থেকে আনা হয় ২৯ লাখ বেল। পরের বছর আমদানীকৃত তুলার ভারতের অংশ ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। বতর্মানে এ হার কমে ১২ শতাংশে এসে ঠেকেছে।

কভিডকালের আগেও তুলা আমদানির বড় গন্তব্য ছিল ভারত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে আমদানি করা মোট তুলার ২৫ শতাংশই এসেছিল দেশটি থেকে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আসে ৯ শতাংশ। এছাড়া আফ্রিকার দেশ বেনিন থেকে ৮ শতাংশ, বারকিনা ফাসো ও মালি—দুই উৎস থেকে আসে ১৬ শতাংশ। আইভরি কোস্ট ও ক্যামেরুন উভয় দেশেরই অবদান ৫ শতাংশ করে। সব মিলিয়ে ওই বিপণন বর্ষে দেশে আমদানীকৃত তুলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এসেছে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে। 

কভিড-পরবর্তী সময়েও একক দেশ হিসেবে তুলা আমদানির বড় উৎস ছিল ভারত। এনবিআরের পরিসংখ্যানভিত্তিক ইউএসডিএর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে মোট তুলা আমদানির ২৪ শতাংশই আসে ভারত থেকে। বেনিন থেকে আমদানি হয় ১৬ শতাংশ, ব্রাজিল থেকে ১৪, বারকিনা ফাসো থেকে ১০ ও ক্যামেরুন থেকে আসে ৭ শতাংশ। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয় মোট আমদানীকৃত তুলার ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ভালো মানের তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করে, যার প্রতিফলন হিসেবে মোট তুলা আমদানিতে আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বাড়ছে। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে ভালোমানের তুলা ব্যবহার করে দেশে সুতা তৈরি হচ্ছে। এসব সুতা ও কাপড়ের তৈরি পোশাক বিশ্ববাজারে রফতানি করছে বাংলাদেশ।’

তুলা আমদানির উৎস পরিবর্তনের কারণ হিসেবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘উন্নত মান নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য নির্বিঘ্ন রাখাও তুলা আমদানির উৎস পরিবর্তনের বড় কারণ। চীন ও ভারতে যে তুলা উৎপাদন হয় তার বড় অংশই নিজেরা ব্যবহার করে। এ প্রেক্ষাপটে ভারত প্রায়ই তুলা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিত, যা বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটায়। নিয়মিতভাবে এ বাণিজ্য বাধা মোকাবেলা করতে হয়েছে বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানিকারকদের।’ 

দেশের সুতা ও কাপড় উৎপাদকদের দাবি, ভারত থেকে যে তুলা আসত তার মান কখনই সন্তোষজনক ছিল না। গুণগত মান বিবেচনায় নিলে অস্ট্রেলিয়া এক নম্বর, দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র ও তৃতীয় অবস্থানে থাকবে আফ্রিকার তুলা। এক্ষেত্রে ভারতের তুলা থাকবে তালিকার ছয় বা সাত নম্বরে। বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর পাশাপাশি ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তুলা আমদানি হচ্ছে। তুলার মানভেদে সুতার মানেও পরিবর্তন আসে। সে অনুযায়ী তৈরি হয় পোশাক। এক্ষেত্রে ক্রেতা যে মানের পোশাকের চাহিদা দেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। হাই-এন্ড বা উচ্চ মানসম্পন্ন পোশাকের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও আফ্রিকার তুলা প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে ভারতের তুলার চাহিদা থাকলেও তা স্থানীয় বাজারনির্ভর।
এই বিভাগের আরও খবর
টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

দৈনিক ইত্তেফাক
বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

দৈনিক ইত্তেফাক
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বণিক বার্তা
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়