কিছুদিন আগেও ইরাকের সংকট নিরসনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হয়েছে। ভয়াবহ সব সমস্যায় জর্জরিত ইরাকিদের পরিত্রাণের উপায় নিয়ে নানা আলোচনা বা সংলাপের আয়োজন করেছে দেশগুলো। বর্তমানে এ পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টে গিয়েছে। ইরাক নিজেই এখন হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে বিবাদ নিরসনে অন্যতম প্রধান ও গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর ভাষ্যমতে, সক্রিয় আঞ্চলিক কূটনীতি ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে আবারো প্রভাবশালী হয়ে উঠছে ইরাক। অন্যদিকে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল কাজেমি হয়ে উঠেছেন আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে দেশটির এ সফল প্রত্যাবর্তনের কারিগর।
কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিশ্চিতে এক নিরাপত্তা সম্মেলনের আয়োজন করে ইরাক। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ সম্মেলনে যোগ দেন। কুয়েত ও ইউএইর সরকারপ্রধানরা ছাড়াও তুরস্ক, সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলন চলাকালে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সরাসরি কোনো বৈঠকের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ইরাক জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে এপ্রিলে শুরু হওয়া আলোচনা চলমান থাকবে।
দুই দেশের বৈরিতা নিরসনে সহসাই বড় কোনো কূটনৈতিক অগ্রগতির নিশ্চয়তা সম্মেলনে দিতে না পারলেও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজের ভূমিকাকে ওই সময় আবারো স্পষ্ট করে তোলে ইরাক। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্যেও বিষয়টি ফুটে উঠেছিল।
উপসাগরীয় যুদ্ধের আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর একটি ছিল ইরাক। সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত আক্রমণ ও উপসাগরীয় যুদ্ধে দ্রুত পরাজয়ের ধারাবাহিকতায় সে প্রভাব খর্ব হয়। এরপর ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে একেবারেই প্রভাবহীন হয়ে পড়ে দেশটি। ইরাককেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক তত্পরতার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। দেশটিকে ঘিরে বিভিন্ন পক্ষ নিজ নিজ স্বার্থের খেলায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ যুদ্ধ শেষ হলেও দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটেনি ইরাকিদের। জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের উত্থান, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বসহ অভ্যন্তরীণ সংকট ও বিশৃঙ্খলায় দেশটি জর্জরিত হয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক সংকটের কেন্দ্রে থাকলেও এর সমাধানে ভূরাজনৈতিক তত্পরতা চালানোর অবস্থায় ছিল না দেশটি। রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের পর আইএসকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে ইরাকি সামরিক বাহিনী। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বসহ অভ্যন্তরীণ অনেক সংকটও এখন অনেকটাই নিরসন হয়েছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক কূটনীতিতে হারানো প্রভাবও একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছে বাগদাদ।
আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ইরাকের এ প্রত্যাবর্তনের পেছনে কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল কাজেমিকে। এরই মধ্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে সক্রিয় অন্যান্য পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনে তার সরকার ভূমিকা রাখছে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। তার নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির সুবাদে ইরাকের অভ্যন্তরীণ সংকটে বাইরের পক্ষগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সক্রিয়তাও এখন অনেকটা কম বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়