যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার ফাউন্ডেশন কার্টার সেন্টার তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। রোববার তিনি জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতেই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
তার ছেলে চিপ কার্টার বলেছেন, ‘আমার বাবা শুধু আমার কাছেই নয়, বরং যারা শান্তি, মানবাধিকার ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাস করে তাদের সবার কাছেই একজন হিরো বা বীর ছিলেন।’
জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্টারকে ‘নীতিবান, বিশ্বাসী ও বিনয়ী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আর সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জিমি কার্টারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ‘কার্টার জীবনভর মানুষের সেবা করে গেছেন।’
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও কার্টারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত জিমি কার্টার ক্ষমতায় এসেছিলেন আমেরিকান জনগণের কাছে কখনো মিথ্যা না বলার অঙ্গীকার করে।
আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর জর্জিয়ার সাবেক এই বাদাম চাষিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো নেতা, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন তিনি।
তবে ইরান বন্দী সঙ্কট নিয়ে চুক্তি করতে এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে।
এক মেয়াদের দায়িত্ব পালনের পরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায়ের পর তিনি তার সুনাম পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হন। এরপর থেকে তিনি শান্তি, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ে বিরামহীনভাবে কাজ করে গেছেন। এ কারণেই তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।
জন্ম, শৈশব আর রাজনীতিতে প্রবেশ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকা জিমি কার্টার গত অক্টোবরেই তার ১০০তম জন্মদিন পালন করেছেন।
তিনি ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং গত ১৯ মাস হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জর্জিয়ার ছোট শহর প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়।
তার বাবা পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে বাদাম চাষ করতেন, আর তার মা লিলিয়ান ছিলেন একজন নার্স।
স্কুলজীবনে তিনি ছিলেন একজন তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সাত বছর কাজ করে সাবমেরিন কর্মকর্তা হয়েছিলেন। ওই সময়েই তার বন্ধুর বোন রোজালিনকে বিয়ে করেন।
তবে ১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরতে ফিরে আসেন।
তার রাজনীতিতে প্রবেশ হয়েছিল একেবারে তৃণমূল থেকে। জর্জিয়ার সিনেটর নির্বাচনের আগে তিনি ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় স্কুল ও লাইব্রেরি বোর্ডের নির্বাচনগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন।
দু’দফায় সিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর হন। এ সময় তিনি প্রকাশ্যেই নাগরিক অধিকারের পক্ষে আরো বেশি কথা বলতে শুরু করেন।
তার শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই বর্ণ বৈষম্যের সময় পার হয়ে গেছে।’
তিনি ক্যাপিটল ভবনে মার্টিন লুথার কিংয়ের ছবি স্থাপন করেন এবং আফ্রিকান আমেরিকানরা যেন সরকারি অফিসে নিয়োগ পান তা নিশ্চিত করেন।
১৯৭৪ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করেন তখন আমেরিকা উত্তাল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে।
এ সময় তিনি নিজেকে পেশাদার রাজনীতিকে চেয়ে একজন বাদাম চাষি হিসেবেই তুলে ধরেন।
শুরুতে জনমত জরিপগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তার মাত্র চার শতাংশ সমর্থনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নয় মাস পর তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে দেন।
দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।
রিপাবলিকান সমালোচক সিনেটর ব্যারি গোল্ডওয়াটার এটিকে ‘একজন প্রেসিডেন্টের জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
কার্টারও স্বীকার করেছিলেন, এটা ছিল তার জন্য খুবই কঠিন একটি সিদ্ধান্ত।
তিনি তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়ে এসেছিলেন।
তিনিই প্রথম কোনো বিশ্বনেতা যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি হোয়াইট হাউজের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছিলেন যা পরে রোনাল্ড রিগ্যান সরিয়ে ফেলেন।
তার সময়ে মার্কিন অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়ে এবং এ কারণে তার জনপ্রিয়তাতেও ধস নামে।
তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনা করলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে পারেননি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়