সাধারণভাবে সমাজে একটা বিশ্বাস আছে যে আমাদের দেশে নতুন যা কিছু চালু হয়, তা কোনো না কোনো দেশকে নকল করেই করা হয়। ঔপনিবেশিক এই মনোভাব এ দেশে আরো কিছু কাল থাকবে।
উপকরণ ও ইন্টারনেটের ব্যবহার
পাঠ্য বই ও শিক্ষক সহায়িকায় পুরনো ক্যালেন্ডার বা কাগজের বাক্সজাতীয় বর্জ্যসামগ্রী দিয়ে পোস্টার বা সমধর্মী উপস্থাপনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীর মা-বাবা, পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে, সুযোগ থাকলে প্রাসঙ্গিক বই পড়বে।
এই প্রসঙ্গে সমালোচনার বিষয় হতে পারে সারা দেশের বিদ্যালয়ে পাঠাগারের অপ্রতুলতা নিয়ে। এই শিক্ষাক্রমের কোনো বিষয়ের কোথাও ফোন-ইন্টারনেট বা দামি উপকরণের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সুযোগ থাকলে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সচেতন অভিভাবক সহজেই পাঠ্য বইয়ের নির্দেশনা দেখে নিয়ে শিক্ষককে কেবল একটি ফোনের মাধ্যমেই যাচাই করতে পারেন যে শিক্ষক কেন ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বলছেন বা এসব উপকরণ কিনতে বলছেন। তাহলে শিক্ষকও দায়িত্ব সচেতন হয়ে উঠবেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত
কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বর্তমান অনুপাতকে সমর্থন করে না। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য এই অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনা এই শিক্ষাক্রমের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবেই বিবেচিত হতে হবে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের সব স্কুলের আসনসংখ্যা সমভাবে বণ্টিত হলে নতুন স্কুল নির্মাণ না করেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিজ্ঞান ও গণিতের গুরুত্ব
কোন বিষয়ের গুরুত্ব কতটুকু তার পরিমাপ করতে হবে মূল পরিকল্পনায় সময় বরাদ্দের মোট কর্মঘণ্টার শতকরা পরিমাণের ভিত্তিতে। নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন নেই, কোনো বিষয়ের গুরুত্ব পরিমাপে বরাদ্দকৃত নম্বর বা বইয়ের সংখ্যা বা বইয়ের পৃষ্ঠার পরিমাণ থেকে হিসাব করা যাবে না। শ্রেণিসংখ্যার শতকরা থেকে হিসাব করা হলে বিজ্ঞান ও গণিতের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। সচেতন পাঠক সহজেই বইগুলো ভালো করে নিরীক্ষা করলে পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন বলে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
উচ্চশিক্ষার মান
আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার আর কোনো জায়গা আছে বলে মনে হয় না। নতুন কারিকুলামের লেখকদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তাঁদের মতামত গণিত-বিজ্ঞান-সামাজিক বিজ্ঞানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সের অন্তর্ভুক্ত কিছু টপিক নতুন করে এই কারিকুলামের পাঠ্যে যুক্ত হয়েছে। এই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়কেই উন্নত হতে হবে, কোর্সের বিষয়বস্তুকে উচ্চতর ধাপে উন্নীত করতে হবে। সমালোচনার বিষয় তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়া, যার পরিবর্তন এই শিক্ষাক্রমের কারণে অনিবার্য হয়ে উঠবে। চলমান পদ্ধতির তথ্যমূলক এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর থেকে মেধাবী ছাত্র নির্বাচন অবৈজ্ঞানিক। নতুন এই শিক্ষা কার্যক্রমের প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা অনিবার্য হয়ে উঠবে।
নানা ধরনের সমালোচনা বা বিরুদ্ধ মতের মধ্যে ‘আগেই ভালো ছিল’ নিয়ে মতামতের কিছু নেই। প্রায় সব ধরনের পরিবর্তনের প্রশ্নে সমাজে এমন ধারার এক সাধারণ-সহজাত প্রবণতা থাকে।
শেষ কথা
খুব কম শোনা গেছে, কিন্তু দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই; এমন একটি সমালোচনা হলো শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও তাঁদের মর্যাদার প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ না দিলে নতুন এই শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। শিক্ষক এই শিক্ষাক্রমের চালিকাশক্তি। বলা ভালো, এই কথাটি সমাজে ব্যাপক সমর্থন পায়নি, নানা সময়ে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলনে সমগ্র সমাজ শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমরা আশা করতে পারি, এই শিক্ষা বাস্তবায়নের অনিবার্য অংশ হিসেবেই শিক্ষকদের বেতনকাঠামোতে পরিবর্তন আসবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নেমে আসবে। বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে উচ্চতর শিক্ষার মানে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ায়।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়