কাহিনীটা অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে। কিন্তু এমনটা হতেই পারত যে তাকে আজ 'ইনকিলাব বচ্চন' বলে মানুষ চিনত। কারণ তার নাম যে দেওয়াই হয়েছিল ইনকিলাব। অবশ্য সেটা তার বাবা মায়ের দেওয়া নাম নয়, এক পারিবারিক বন্ধু পণ্ডিত অমরনাথ ঝা রেখেছিলেন সেই নাম।
ভারতে তখন এক অর্থে ইনকিলাব বা বিপ্লবই চলছিল। ভারত ছাড় আন্দোলনের কারণে ১৯৪২ এর সেই বছরটা গোটা দেশ তখন উত্তাল। সে বছরের ১১ অক্টোবর এলাহাবাদে হিন্দি ভাষার জনপ্রিয় কবি হরিভনশ রাই বচ্চন আর তেজি বচ্চনের কোল আলো করে একটি পুত্র সন্তান এল। সেদিনই তার অমিতাভ নামটাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
ইনকিলাব থেকে যেভাবে বচ্চন:
অমিতাভ বচ্চনের ওপরে সম্প্রতি প্রকাশিত বই 'অমিতাভ বচ্চন দা ফরএভার স্টার'-এর লেখক প্রদীপ চন্দ্রা বলছিলেন, "যেদিন অমিতাভ বচ্চনের জন্ম হল, সেদিনই তাদের বাড়িতে থাকতে এসেছিলেন হিন্দি ভাষার প্রখ্যাত কবি সুমিত্রানন্দন পন্থ। তিনি অন্য কারও বাড়িতে উঠেছিলেন। অমিতাভের বাবা হরিভনশ রাই বচ্চন দেখা করতে গিয়েছিলেন তার সঙ্গে। তিনি মি. পন্থকে বলেন যে 'এখানে আছেন কেন, আপনি আমাদের বাড়িতে চলুন।'
"পান্থ রাজি হয়ে গেলেন বচ্চন পরিবারের সঙ্গে থাকতে। সেদিনই শিশু সন্তান এসেছে বাড়িতে। সদ্যোজাত শিশুটিকে দেখার পরেই সুমিত্রানন্দন পন্থ তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'এর নাম তো অমিতাভ হওয়া উচিত।' আর পণ্ডিত অমরনাথ ঝা শিশুটির নাম রেখেছিলেন ইনকিলাব। কিন্তু সেই নাম বেশি দিন থাকে নি। বচ্চন পরিবার অমিতাভ নামটাকেই বেছে নিয়েছিলেন," বিবিসিকে বলছিলেন প্রদীপ চন্দ্রা।
মেয়েদের কলেজে নাটক করেছেন বচ্চন:
নৈনিতালের শেরউড স্কুলে পড়াশোনার পরে অমিতাভ দিল্লি চলে আসেন, ভর্তি হন কিরোরিমল কলেজে। সেখানেই নাটক করার প্রচুর সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কলেজের ড্রামা সোসাইটির প্রধান ফ্র্যাঙ্ক ঠাকুরদাস অমিতাভ বচ্চনের সেই গুরুগম্ভীর গলার স্বরে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। পরে, মিরান্ডা হাউস কলেজের একটা নাটক 'রেপ অফ দা বেল্ট'এও অভিনয় করেন। ওই নাটকের পরে তোলা একটি ছবি অমিতাভ বচ্চন ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ২০১৩ সালে।
৪৬০ টাকা বেতনে চাকরিতে যোগ দেন:
বি এ পাশ করার পরে অমিতাভ বচ্চন কলকাতায় বার্ডস এন্ড কোম্পানিতে চাকরী নেন। সেটা ছিল গত শতাব্দীর ষাটের দশক। বার্ডস কোম্পানির কয়লা খনি, চটকল, কাগজ কল সহ বিভিন্ন ব্যবসা ছিল। কলকাতার ডালহৌসি এলাকায় মহাকরণের কাছেই ছিল ওই কোম্পানির সদর দপ্তর। ১৯৭৪ সালে ওই কোম্পানি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। তাদের হাতে রয়ে যায় শুধু চটকলের ব্যবসা। ২০১১ সালে অমিতাভ বচ্চন টুইট করেছিলেন পুরানো সেই দিনের কথা মনে করে। "কলকাতা.. তখনকার ক্যালকাটা... প্রথম চাকরী বার্ড এন্ড কোং-এ.. বেতন ৫০০ টাকা প্রতিমাসে, কেটে কুটে ৪৬০ টাকা"। দ ’বছর পরে আরেকটা সংস্থা ব্ল্যাকার এন্ড কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি। সেখানে তার বেতন তো বেড়েছিলই, সঙ্গে অফিস যাতায়াতের জন্য একটা মরিস মাইনর গাড়িও দেওয়া হয়েছিল। অভিনয়ের প্রতি অমিতাভ বচ্চনের টান দেখে ছোট ভাই অজিতাভ বচ্চন তার একটা ছবি পাঠিয়ে দেন 'ফিল্ম ফেয়ার মাধুরী ট্যালেন্ট কন্টেস্টে'।
বার বার রিজেক্ট হয়েছেন:
ফিল্মের জগতে অমিতাভ বচ্চনের প্রবেশ ঘটেছিল নার্গিস ও সুনীল দাতের সঙ্গে তেজি বচ্চনের বন্ধুত্বের মাধ্যমে। কিন্তু তার আগে ১৯৬৮ সালে প্রখ্যাত ফিল্ম পরিচালক শ্রাভন কুমার টাকের সঙ্গে তেজি বচ্চনের দেখা হয়েছিল দিল্লিতে। মিসেস বচ্চন তাকে বলেছিলেন যে তার ছেলে ফিল্মে কাজ করতে আগ্রহী। মি. টাক সেই সময়ে মির্জা গালিবের ওপরে একটা ছবি করার পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি অমিতাভ বচ্চনকে মির্জা গালিবের চরিত্রটা দেওয়ার কথা ভেবে ফেলেছিলেন। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠরা তাকে বোঝান যে গালিবের চরিত্রে অমিতাভ বচ্চন মানানসই হবেন না, কারণ তিনি ভীষণ লম্বা, আর গালিব বেশ বেঁটেই ছিলেন। এরপরে সুনীল দাতের সুপারিশে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা বি আর চোপরা অমিতাভ বচ্চনের স্ক্রিন টেস্ট নিতে রাজী হলেন। কিন্তু তারপরে মি. চোপরার কাছ থেকে আর কোনও সাড়া পান নি তিনি।
প্রদীপ চন্দ্রার কথায়, "অমিতাভ বচ্চন সব জায়গা থেকেই রিজেক্টেড হয়ে যাচ্ছিলেন। আকাশবাণী তাকে পছন্দ করে নি আগে। তারপরে তিনি মুম্বাই গেলেন। সুনীল দাতের সঙ্গে বি আর চোপড়ার ভাল সম্পর্ক ছিল। মি. দাত বি আর চোপড়ার ছবিতে নিয়মিত কাজ করতেন। মি. দাত সুপারিশ করেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের জন্য। তিনি গিয়েছিলেন মি. চোপড়ার সঙ্গে দেখা করতে।
"মি. চোপরা দেখা করলেন ঠিকই, কিন্তু বিশেষ কোনও ইন্টারেস্ট দেখান নি মি. বচ্চনের ব্যাপারে। তবে একটা কাজ তিনি করেছিলেন। তার এক বন্ধুকে বলেছিলেন এই ছেলেটির স্ক্রিন টেস্ট নিয়ে নাও। সেই বন্ধুটি ছিলেন ফিল্ম প্রোডিউসার তারাচাঁদ বরজাতিয়া," জানাচ্ছিলেন প্রদীপ চন্দ্রা।
তার কথায়, "তিনি তো অমিতাভ বচ্চনকে দেখেই বাতিল করে দিলেন। বললেন, আরে আপনাকে তো কবি কবি দেখতে। মি. বচ্চন তো কুর্তা পাজামা পরতেন। তা দেখে মি. বরজাতিয়া বললেন, আপনি এইসব ফিল্মের জগতে কেন আসছেন, কবিতা লিখুন বাবার মতো। এরকম আরও অনেকেই বাতিল করেছেন অমিতাভ বচ্চনকে।"
প্রথম সিনেমায় পরিশ্রমিক পান ৫ হাজার :
তাকে প্রথম ফিল্মে নেন নামকরা পরিচালক খ্বাজা আহমেদ আব্বাস। পরিচালক টিনু আনন্দের বন্ধু নীনা সিং মি. আনন্দকে অনুরোধ করেছিলেন যে অমিতাভ বচ্চনের কিছু ছবি যেন তিনি মি. আব্বাসকে দেখান। তখন আব্বাস বললেন, ডাকো একে। তো দুই ভাই অমিতাভ আর অজিতাভ কলকাতা থেকে মুম্বাই গেলেন দেখা করতে। প্রথমে তারা টিনু আনন্দের সঙ্গে দেখা করেন। বচ্চন আমাকে নিজের মুখে যেটা বলেছেন, সেখানে গিয়ে তিনি বলেন যে বাথরুমে যেতে পারি একটু? ভেতর থেকে মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসার পরে টিনু আনন্দ তাকে আব্বাস সাহেবের কাছে নিয়ে যান। তার পছন্দ হয়ে গেল। অমিতাভ বেরিয়ে যাওয়ার পরে আব্বাস সাহেব বলেন একে বলে দাও যে ছবিতে নেব, কিন্তু পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারব। কিন্তু এটা বলতে পারব না যে ছবিটা তৈরি হতে পাঁচ মাস লাগবে না একবছর।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়