মার্কেটিং বা বিপণনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। বিভিন্ন সেবা ও পণ্য কেনাবেচার জন্য নানা পর্যায় ও চাহিদার ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হয়; আবার মাথায় রাখতে হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহারকারীর কথা। এখানে কোনো সোজাসাপ্টা পথ নেই। আর এ ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপণন খাত বরাবরই প্রযুক্তিনির্ভর। আর সময়ের সবচেয়ে নতুন প্রযুক্তিটি এ খাতে ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) এ সময়ে এ প্রযুক্তি বিপণন খাতকে নতুন এক রূপ দিয়েছে। কার্যত এ শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রই হয়ে উঠেছে এআইনির্ভর। লিখেছেন শাহেরীন আরাফাত
এআই কয়েক দশক ধরেই আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এ প্রযুক্তি বহু আগে থেকেই বিপণন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। অনেক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ করা হয় এআই ব্যবহার করে। সম্প্রতি বিপণন খাতে যে বিষয়টি আলোচনার ঝড় তুলেছে, তা হলো সৃজনশীল নতুন বিপণন ধারণা নির্মাণে জেনারেটিভ এআই বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে নিজে নিজে শিখতে পারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। এসব প্রযুক্তির ব্যবহার এখন আরও সহজলভ্য ও সহজে ব্যবহারযোগ্য। বিপণন শিল্প এখন একটি মৌলিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে।
শিল্প গবেষণা
জেনারেটিভ এআইভিত্তিক যোগাযোগ কোম্পানি বটকো গত মার্চে একটি গবেষণা সম্পন্ন করে। তারা ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬টির বেশি ভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা ও কোম্পানিতে সমীক্ষা চালায়। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে মাত্র একজন কর্মী রয়েছেন, আবার কোনোটিতে কর্মীসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। অন্তত এক হাজার পেশাদার বিপণনকর্মীর ওপর চালানো এ সমীক্ষার ফল অবাক করার মতো। ৭৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, এরই মধ্যে টেক্সট, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য করার জন্য তারা জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা হয়।
কনটেন্ট জেনারেটিভ এআই
জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করার যুক্তি হিসেবে ৫৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে তারা বিপণন কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারেন; ৫০ শতাংশের মতে, এর মধ্য দিয়ে তারা সৃজনশীলতা বাড়াতে পারেন; ৫০ শতাংশের মতে, এটি সৃজনশীলতা বৃদ্ধির ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিগুলোর চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। এ ছাড়া এটি বস্তুগতভাবে দ্রুত সৃজনশীল কাজ করতে সক্ষম বলে মনে করেন ৪৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে তৈরি হওয়া বিষয়বস্তুর পরিধি বিস্তৃত। এআই উৎপাদিত বিষয়বস্তু সব ধরনের সৃজনশীল কাজের মধ্যেই রয়েছে, যেমন– টেক্সট, ছবি, ভিডিও, কোডিং ইত্যাদি।
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কপিরাইটার বা ওয়েবসাইট ডেভেলপার আপনার জন্য যা করতেন, এ প্রযুক্তি এর সবকিছুতেই রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বললে সে নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়েবসাইট নির্মাণ করে দিতে পারে বা গ্রাফিক্সের কাজ করে দিতে পারে। আর এতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। এতে সৃজনশীলতা বলতে যা ব্যবহার করা হয়, তা হলো সিস্টেমের পারিপার্শ্বিকতা বা যে আবহে এআই কাজ করছে সেটি। এসব প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এআই এক ধরনের সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে কাজের ক্ষেত্রে। আর এটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিশেষত্ব।
সমীক্ষার উত্তরদাতাদের মতে, বিপণনকারীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন চ্যাটজিপিটি। ৫৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এ সিস্টেম ব্যবহার করেছেন। ভাষাবিষয়ক প্রযুক্তি কপি এআই ব্যবহার করছেন ৪২ শতাংশ। কপিরাইটিং বা সম্পাদনার জন্য ৩৫ শতাংশ জেসপার এআই ব্যবহার করছেন। সম্পূর্ণ নিবন্ধ অনুলিপির জন্য ২৯ শতাংশ ব্যবহার করছেন পেপারটাইপ এআই। এ ছাড়া ছবি সম্পাদনার জন্য লেন্সা ব্যবহার করছেন ২৪ শতাংশ। লেখা থেকে ছবি তৈরির জন্য ডেল-ই ব্যবহার করছেন ২৫ শতাংশ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, জেনারেটিভ এআই কি মানুষকে প্রতিস্থাপন করবে? না, সম্পূর্ণভাবে তা সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মানুষকে বস্তুগতভাবে আরও দক্ষ করে তুলবে এবং আগের তুলনায় কম মানুষের প্রয়োজন হতে পারে। তবে কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং মান নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষের দরকার ফুরিয়ে যায়নি। সেই সঙ্গে এআই সম্পর্কে দক্ষতা ছাড়া ভবিষ্যতে বিপণন পেশায় অগ্রগতিও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। হয়তো আপনাকে বিপণনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে আপন করে নিতে হবে; নয়তো আপনাকে এ প্রযুক্তির ধাক্কার অপেক্ষায় থাকতে হবে, যখন আপনার প্রতিষ্ঠানটি ধসে পড়বে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়