আপাতত টার্গেট ৫ দেশ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে অন্তত ৫০ দেশ। মেড ইন বাংলাদেশের ট্যাগ লাগিয়ে প্রযুক্তির বিশ্ববাজারে স্থান করে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট। শুধু হ্যান্ডসেট নয় পাশাপাশি ল্যাপটপ, ট্যাব, চার্জার, মোবাইল ব্যাটারি থেকে শুরু করে হেডফোনের মতো প্রযুক্তি পণ্যও রপ্তানির তালিকায় স্থান করে নিতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে প্রথমবারের মতো নেপালে মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে নেপালে তিনটি মডেলের প্রায় ১৫ হাজার মোবাইল সরাসরি এ্যাপেক্স গ্রুপের কাছে পাঠায় সিম্ফনি। ২২শে জানুয়ারি আরও ১০ হাজার সেট পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট মানসম্মত হওয়ায় এরইমধ্যে নেপাল বাজারে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এজন্য প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারজাত করা হবে বলে জানিয়েছে সিম্ফনি কর্তৃপক্ষ। নেপালের পাশাপাশি খুব শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে উৎপাদিত সিম্ফনির মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি করা হবে নাইজেরিয়া, সুদান, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকায়। সিম্ফনি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সিম্ফনি মোবাইলই প্রথম সরাসরি ব্র্যান্ড নেইম নিয়েই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন রপ্তানি করছে। এটাকে তারা দেশের রপ্তানি খাতে নতুন এক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করছে। এ প্রসঙ্গে সিম্ফনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ মানবজমিনকে বলেন, সিম্ফনি মোবাইল বাংলাদেশের ব্র্যান্ড।
বাংলাদেশ থেকে আমরা প্রতি মাসেই ১০ হাজার প্রডাক্ট নেপালের মার্কেটে রপ্তানি করবো। আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতি মাসে ১০ লাখ প্রডাক্ট আমরা উৎপাদন করতে পারি। এই ফ্যাক্টরিতে ১৩শ’ মানুষ কাজ করছে। তারা সবাই বাংলাদেশি। এর পাশাপাশি প্রায় আরও কয়েক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই উৎপাদন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছে। তিনি বলেন, মানের দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কোনো অংশে কম নয় আমাদের তৈরি হ্যান্ডসেটগুলো। একেকটি হ্যান্ডসেটের গুণগত মান ঠিক রাখতে ৮টি স্তর পার করানো হয়। এখন যেসব হ্যান্ডসেট রপ্তানি করা হচ্ছে তার সবগুলোই ফোরজি প্রযুক্তি সাপোর্টেড। খুব শিগগিরই আমরা ফাইভজি সাপোর্ট নির্ভর হ্যান্ডসেট উৎপাদনে যাবো।
২০১৮ সালে সিম্ফনি মোবাইল প্রায় ৫৫ হাজার স্কয়ারফিট জায়গায় তাদের যাত্রা শুরু করে আশুলিয়ার জিরাবোতে। এখন আশুলিয়ার আউকপাড়া ডেইরি ফার্মে নিজস্ব জমিতে সিম্ফনি মোবাইলের ফ্যাক্টরিটি প্রায় ২ লাখ স্কয়ারফিট জায়গার উপর নির্মিত যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মোবাইলফোন উৎপাদিত হচ্ছে। স্মার্টফোনের পাশাপাশি মোবাইলফোনের নানা যন্ত্রাংশ এবং এক্সেসরিজও তৈরি করছে সিম্ফনি। সিম্ফনির কারখানায় প্রতি মাসে ৮ লাখ চার্জার, ৮ লাখ ব্যাটারি এবং ৮ লাখ ইয়ারফোন উৎপাদিত হচ্ছে, সামনে তা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে সিম্ফনি কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়াও মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাবলেটের ঘোষণাও দিয়েছেন জাকারিয়া শহীদ। এদিকে মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তিবান্ধব নীতির ফলে ২০১৮ সালের পর থেকে দেশীয় কারখানায় উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট এ পর্যন্ত দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৬৩ ভাগ পূরণ করছে। এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত মোবাইলফোন হ্যান্ডসেট দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি শুরু হয়েছে। সামনের ৫ বছরে বিশ্বের ৫০টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিজিটাল যন্ত্র রপ্তানি হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল যন্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে বাংলাদেশকে উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তরের জন্য ২০১৫ সালের ৬ই আগস্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনাসহ যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়নের ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ ডিজিটাল ডিভাইস আমদানিকারী দেশ থেকে উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তর লাভ করেছে বাংলাদেশ। গুণগত মানের সঙ্গে কোনো প্রকার আপস না করে বিশ্বের সেরা মানের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় মেড ইন বাংলাদেশ মোবাইল হ্যান্ডসেট সহসাই বড় একটি জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল প্রযুক্তি জগতে তার দীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে তরুণ জনগোষ্ঠী। তিনি এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে বলেন, মহাকাশ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন না করেও আমাদের ছেলেমেয়েরা নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
অনুরূপভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির উৎপাদন বিষয়ে লেখাপড়া না করেও দেশের ১৪টি মোবাইল কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার তরুণ-তরুণী দক্ষতার সঙ্গে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মোবাইল কারখানাসমূহ উৎপাদন ইউনিটসমূহে দেখলে আন্দাজ করাই কঠিন হবে যে আমরা শিল্পোন্নত দেশ নই। সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধপরিকর। তিনি কারখানাগুলোতে মোবাইল হ্যান্ডসেটের পাশাপাশি ট্যাব, কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়