মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্য সামিট ফর ডেমোক্রেসি। শতাধিক দেশের অংশগ্রহণে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে সভাপতিত্ব করবেন বাইডেন। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের পিছিয়ে পড়া, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা অবক্ষয় ঠেকানো।
মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক অলাভজনক বিশেষায়িত গ্রুপ পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অ্যাট ফ্রিডম হাউজের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানি বয়াজিয়ান বলেন, যদি এ সম্মেলন শুধু একটি সভার চেয়ে বেশি কিছু হতে চায় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রত্যেক উপস্থিতিকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে অর্থবহ অঙ্গীকার করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিসেম্বরের আয়োজন মূলত গণতন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট দেশের প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনে আগামী বছরে পরিকল্পিত সম্মেলনের ব্যাপারে দীর্ঘ আলাপের সূত্রপাত। আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ আয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে দেয়া বাইডেনের বক্তব্যের জন্য এটি একটি বড়সড় পরীক্ষা, যেখানে তিনি রাশিয়া ও চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসন উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে ফিরিয়ে নিতে চান।
পলিটিকোয় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের আয়োজিত এ সম্মেলনে সম্ভাব্য অতিথি তালিকায় পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ ফ্রান্স ও সুইডেনের পাশাপাশি রয়েছে ফিলিপাইন ও পোল্যান্ডও। মানবাধিকারকর্মীদের বিবেচনায় এ দেশ দুটিতে গণতন্ত্র রয়েছে ঝুঁকির মুখে। প্রশ্ন উঠেছে এশিয়া অঞ্চল থেকে আমন্ত্রিত দেশের তালিকায় থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম না থাকা নিয়েও। তবে এ অঞ্চলে মার্কিন মিত্র দেশ বলে পরিচিত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে আমন্ত্রিতের তালিকায়।
মধ্যপ্রাচ্যেও বাছাইকৃতরাই রয়েছে আমন্ত্রণ তালিকায়। এ এলাকা থেকে অল্প কয়েকটি দেশের তালিকায় ইরাক ও ইসরায়েল থাকলেও মার্কিন মিত্র বলে পরিচিত মিসর নেই। আমন্ত্রণ পাচ্ছে না ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ তুরস্কও।
মানবাধিকারকর্মীরা বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার তালিকায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনঃস্থাপনের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন। যেখানে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উত্খাত করে মিসরের ক্ষমতা দখল করা সামরিক শাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করেছিলেন। একই সঙ্গে তারা যেসব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির রেকর্ড ভালো নয় এমন দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর ফলে আয়োজনের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এছাড়া এ আয়োজনকে পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থানের বিপরীতে মার্কিন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তায় সমতা আনার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্রেসি নামে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের গবেষণা পরিচালক অ্যামি হথর্ন বলেন, এটা স্পষ্ট চীনকে টেক্কা দিতেই দেশটির আঞ্চলিক প্রতিবেশী ভারত ও ফিলিপাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে গণতন্ত্র অত্যন্ত সংকটাপন্ন ও ক্ষয়িষ্ণু পরিস্থিতিতে রয়েছে। একই কারণে ইরানের প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ ইরাককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র বিকাশে বাইডেনের আমন্ত্রণ পাওয়া ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে মানবাধিকার বিষয়টিকে কখনই গুরুত্বের সঙ্গে দেখেননি। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামল দেশটিকে কর্তৃত্ববাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ফ্রিডম হাউজ।
ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বাইডেনের আসন্ন অনলাইনে গণতন্ত্র সম্মেলনে দুতার্তের আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে বলা হচ্ছে, দুতার্তের উপস্থিতি বিষয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কোনো শর্ত রাখা হয়নি। সূত্র বলছে, দেশটির সরকার এখন পর্যন্ত ওই সম্মেলনে অংশ নেয়ার বিষয় বিবেচনা করছে।
আসন্ন সম্মেলনের পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের গণতন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা হওয়া দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য এটা নয়, কে গণতান্ত্রিক এবং কে গণতান্ত্রিক নয় তা চিহ্নিত করা। এটা যথাযথ প্রক্রিয়া নয় বলেও আমরা মনে করি।
বাইডেন প্রশাসনের এ কর্মকর্তা বলেন, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও বড় অংশগ্রহণের নিমিত্তে (কারা অংশ নেবেন) এটা যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সম্মেলনের কিছুদিন আগেও এটা পরিষ্কার নয় যে কীভাবে ওয়াশিংটন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি করা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা এবং নেতারা কথা রাখছেন কিনা তা নজরদারি করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাবে গণতন্ত্রের পিছিয়ে পড়া দেশ বলে বিবেচিত পোল্যান্ডকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে দেশটির সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের শর্তযুক্ত আমন্ত্রণে পোল্যান্ড ক্ষিপ্ত হয়েছে।
পোল্যান্ডের ডানপন্থী সরকারের সমকামীদের অধিকারে বাধা দিলে এলজিবিটিকিউআইদের অধিকারসহ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিষয়ে করণীয় বেশকিছু শর্ত দেয় ওয়াশিংটন। পরে মার্কিন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র কোনো শর্ত চাপিয়ে দিতে চায় না। তবে আমন্ত্রিত দেশগুলো তাদের অঙ্গীকারের ব্যাপারে এগিয়ে আসবে বলে আশা করে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়