একটি ক্যামেরা ও হার্ডডিস্ক বেশ কয়েকবার বন্ধু ও অফিসের কর্মচারীদের কাছে রেখেছেন ব্যবসায়ী ইমরোজ (ছদ্মনাম)। পরে ডিভাইসগুলো এনে অফিসেই রেখে দেন। কিছু দিন আগে এগুলো হারিয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় বিপত্তি। অজ্ঞাত ফেসবুক আইডি থেকে মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে এবং তার বন্ধুর ফেসবুক মেসেঞ্জারে একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া শুরু হয়। প্রেমিকার সঙ্গে ইমরোজের ঘনিষ্ঠ সময়ের কিছু ভিডিও ভাইরাল করে দেবে বলে ভয় দেখানো হয়। ৩০ লাখ টাকা দাবি করে অজ্ঞাত হুমকিদাতা।
উপায় না দেখে ইমরোজ সহযোগিতা চান সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের। সেখানে কর্মকর্তাদের পরামর্শে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।
তদন্তের একপর্যায়ে গত ২৯ ডিসেম্বর ইমরোজের কথিত ভাতিজা শুভকে শেরপুর থেকে গ্রেফতার করে সংস্থাটি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এমন তথ্য বের হয়ে আসে, যা ইমরোজ কল্পনাও করেননি। অফিসে রেখে দেওয়া ইমরোজের ডিভাইসগুলো চুরি করে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এই শুভ। অথচ ইমরোজ সন্দেহ করছিলেন যাদের কাছে ক্যামেরা রেখেছিলেন তাদের।
সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমে ভুক্তভোগী ইমরোজ তার বন্ধু ও অফিসের কর্মচারীকে সন্দেহ করার কথা বলেন। পরে আমরা বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখি। আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ২১ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপরাধে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৯, ২৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন ইমরোজ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর ইমরোজের অফিস থেকে একটি ক্যানন ক্যামেরা ও একটি হার্ডডিস্ক হারিয়ে যায়। সেই ক্যামেরা ও হার্ডডিস্কে তার ব্যক্তিগত ছবি ও অফিসিয়াল ডকুমেন্টসহ প্রয়োজনীয় ডাকা সংরক্ষিত ছিল। গত ১০ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামির ফেইক ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জার থেকে ইমরোজের মেসেঞ্জারে কিছু ব্যক্তিগত আপত্তিকর ছবি, ভিডিও পাঠায়। সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না পাঠালে এসব ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। তারা নওরোজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এবং তার বন্ধুর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও পাঠায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা আসামিরা একাধিক ব্যক্তির ছদ্মবেশে ধারণ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
সাবধানতা ও সতর্কতা
প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তিগত ডিভাইসগুলোর শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা উচিত। না হলে চুরি হতে পারে ব্যক্তিগত যেকোনও তথ্য। যেখানে সেখানে বা যার তার কাছে ডিভাইস রাখাও নিরাপদ নয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসব সেনসিটিভ কনটেন্ট ডিভাইসে ধারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব বিষয় যদি কারও হাতে যায়, ব্যক্তিকে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত বা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কোনও প্রমাণ হাতে না আসা পর্যন্ত কারও নামে মামলা করা যায় না। আমাদের মূল্যবান সম্পদকে যেখানে সেখানে ফেলে রাখতে পারি না। হার্ডডিস্কে আমার গুরুত্বপূর্ণ কোনও তথ্য বা কনটেন্ট থাকতেই পারে। সেটি আমি রাস্তাঘাটে ফেলে রাখলে তা বিপদের জন্ম দিতে পারে। এসব বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পলিসি চেয়ার তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেকোনও ডিভাইসই হোক না কেন, প্রথমেই পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে স্ক্রিন লক চালু করতে হবে। যা অন্য কারও হাতে পড়লেও ডিভাইসকে সুরক্ষা দেবে। ডিভাইসটি গুগল কিংবা অন্য কোনও ক্লাউড সেবার সঙ্গে সিংক করে রাখতে হবে। তাহলে ফোন হারিয়ে গেলেও আপনার তথ্য হারাবে না। আপনার ডিভাইসে যদি সংবেদনশীল তথ্য থাকে তবে কোনও টুল ব্যবহার করে ডাটা এনক্রিপ্ট করে রাখুন।
আইনি প্রতিকারের বিষয়ে আইনজীবী কে এম মাহফুজুর রহমান মিশুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মানহানিকর বা বিভ্রান্তিকর কোনও কিছু পোস্ট করলে, ব্যক্তিগত সংবেদনশীল ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, অথবা কারও নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিলে, কোনও স্ট্যাটাস কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে। আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন এবং প্রতিকার পেতে চান, তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর আশ্রয় নিতে পারেন। এ আইনের আওতায় থানায় এজাহার দায়ের করতে পারেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেও এ ধরনের হয়রানির প্রতিকার পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, কোনও কারণে আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন, বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাতে হবে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখতে পারেন। এতে কেউ আপনাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করলে আপনি সুরক্ষা পেতে পারেন। এছাড়া লিখিতভাবে জানিয়ে রাখতে পারেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেও (বিটিআরসি)।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়